১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জুয়া ও মদের আসরে অভিযান

দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

-

রাজধানীর চারটি জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এ সময় বিপুল মদ, বিয়ার ও ইয়াবা উদ্ধার হয় এবং ১৮২ জনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। খবরে প্রকাশ, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের কিছু নেতা দীর্ঘ দিন ধরে এগুলো চালিয়ে আসছেন। গতকালের এ অভিযানে একটি জুয়ার আসরের মালিক যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ হাসান ভূঁইয়াকেও আটক করা হয়। রাজধানী ঢাকায় জুয়ার আসর জমানোর ব্যাপারটি অনেকটা প্রকাশ্যেই চলছিল। এত দিন আয়োজকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা এ অবৈধ কর্মকাণ্ড করার সুযোগ পেয়ে আসছিল। শুরুতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে অবাধে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড দীর্ঘ দিন চলতে পারত না।
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দলীয় কার্যনির্বাহী সভায় যুবলীগের কয়েকজন নেতার বিষয়ে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কিছু নেতার প্রতি তিনি বিরক্ত হয়েছেন। রাষ্ট্রের একেবারে শীর্ষ নির্বাহীর এমন কঠোর মনোভাবের পর দেখা গেল ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। আরো ব্যতিক্রমী ঘটনা হলো, যুবলীগের প্রভাবশালী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনিয়ম, দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে এমন অবস্থান গ্রহণ ইতিবাচক। কিন্তু অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময় সরকারের একই ধরনের অবস্থান থাকা উচিত। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অবস্থান সব সময় থাকা উচিত কঠোর। বাস্তবে এমনটি দেখা যায় না। ফলে অন্যায় অবৈধ কর্মকাণ্ড ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে বাংলাদেশে।
যত দূর খবর পাওয়া যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের এবারের প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা মদ ও জুয়ার আসর জমাতে শুরু করে। ক্রমেই এই আসরের পরিধি বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমে এ ব্যাপারে নানা সময় বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে বিভিন্ন সময় এর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে আবার থেমে যেতে হয়েছে। কারণ, যারা জুয়া ও মদের আসর জমিয়েছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্য। এরা আবার ক্ষমতার ওপরের দিকে থাকা অনেককে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে চলে। মদ-জুয়া থেকে আসা অর্থের একটি নির্ধারিত পারসেন্টেজ ক্ষমতার ওপরের দিকের ব্যক্তিদের অনেকের কাছে পৌঁছে যেত। ফলে এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ওপরের দিক থেকে বাধা পেয়ে থেমে যেত। এবার আর থামানো যায়নি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে। ক্ষমতার ওপরের দিকে যারা জুয়া-মদের আসরকে প্রণোদনা দেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তা নাহলে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড আবারো শুরু হতে বেশি সময় লাগবে না।
আইনশৃঙ্খলার একটা নিজস্ব গতির কথা বলা হয়। আইন যখনই ভঙ্গ হবে তখনই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ক্যাসিনোতে অভিযানটি ক্ষমতাসীন দলের যুবসংগঠন যুবলীগের বিরুদ্ধেই যেন পরিচালিত হয়েছে। দলটির এক শীর্ষ নেতাকে আটক করা হয়েছে। তার সাথে জব্দ করা হয়েছে অস্ত্র, অর্থ ও মাদক। এ অবস্থায় যুবলীগের একেবারে শীর্ষ নেতারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন। তাদের অভিযোগ হচ্ছে, এত দিন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ‘কী করছে’? এত দিন প্রকাশ্যে এ অবৈধ ব্যবসা চলার জন্য তারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে ভর্ৎসনা দিচ্ছেন। সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন, আইন সব সময় সমান গতিতে চলছে না। কেবল প্রধানমন্ত্রী একটা অবস্থান গ্রহণের পর সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একজন প্রধানমন্ত্রী দেশের কয়টি ব্যাপারে নাক গলাবেন। এটা বাস্তবে সম্ভবও নয়।
রাজধানীতে এ ধরনের ১২টি জুয়া ও মদের আসর রয়েছে বলে খবর বের হয়েছে। এগুলো থেকে বছরে চাঁদা উঠছে প্রায় সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা। যুবলীগের প্রভাবশালী নেতারা এগুলোর সাথে জড়িত রয়েছেন। সরকার সত্যিই যদি মদ-জুয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে চায়, তাহলে এদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement