২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ভারত সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা

মাদকে ধ্বংস হচ্ছে বাংলাদেশের যুবসমাজ

-

সহযোগী একটি দৈনিকে সীমান্তে ফেনসিডিল উৎপাদনের কারখানা নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। হিলি সীমান্ত ও এর আশপাশ এলাকায় কিভাবে বানের পানির মতো ভারত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল ঢুকছে তার সরেজমিন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সীমান্তের ভারতীয় অংশে অসংখ্য ফেনসিডিল কারখানা গড়ে উঠেছে। এগুলোতে উৎপাদিত ফেনসিডিল ওষুধ হিসেবে ভারতে বিক্রি হয় না। নেশা বাড়িয়ে তোলার জন্য এতে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ মেশানো হয়। বাংলাদেশের মাদক গ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে এই নেশাদ্রব্য তৈরি করা হয়। আর চোরাকারবারিরা সীমান্তের বিভিন্ন অংশ দিয়ে এর অনুপ্রবেশ করায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। বাস্তবে চোরাই ফেনিসিডিল অবাধে সীমান্তে হাতবদল হচ্ছে। সীমান্তে দেদার এর বেচাবিক্রি হয়। এগুলো ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চোরকারবারিদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে।
দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের আশপাশে অনেক পয়েন্ট দিয়ে ফেনসিডিল বাংলাদেশে ঢুকছে। চোরচালানির সুবিধার্থে বোতলের পরিবর্তে তরল ফেনসিডিল পলিথিনের মাধ্যমে সারা শরীরে পেঁচিয়ে সীমান্ত অতিক্রিম করে। শেষ রাতে অনেকে এভাবে ফেনসিডিল বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। প্রতিবেদক সরেজমিন এ ধরনের একটা রুটে শেষ রাতে গিয়ে দেখতে পান সেখান দিয়ে চলাচলকারী প্রত্যেকের শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মোটা। তিনি একজনের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে ‘মাল বহন করে’। একজন আট লিটার করে এভাবে পাচার করেন। সীমান্ত পার করে দেয়ার জন্য একেকজন পনেরো শ’ টাকা করে পান। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে পাচারকারীদের জন্য অপেক্ষা করে বিভিন্ন যানবাহন। তারা মুহূর্তের মধ্যে এসব মাদক নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। এগুলো বোতলজাত হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এক শ’ মিলিলিটারের এক বোতল ফেনসিডিল ভারতে ৬৫ থেকে ৭২ রুপি। পাচার হয়ে এলে একই পরিমাণ ফেনসিডিল ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজধানী ঢাকায় এই পরিমাণ ফেনসিডিলের দাম ওঠে পনেরো শ’ থেকে আঠারো শ’ টাকা। এসব ফেনসিডিল বিশেষ ব্যবস্থায় উৎপাদন হয়। নেশা ধরানোর জন্য এতে মাত্রাতিরিক্ত কোডিন ফসফেট মেশানো থাকে। ভারতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরীক্ষাগারে বিষয়টি ধরা পড়েছে। দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের ৩৫টি পয়েন্ট দিয়ে বানের পানির মতো মাদক ঢুকছে। পাশাপাশি জয়পুরহাটের পাঁচবিবিও মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট। সীমান্তের ভারত অংশে ফেনসিডিল উৎপাদনের ৬০টি বড় ধরনের কারখানা রয়েছে। শুধু ত্রিপুরা সীমান্তে ১০টি কারখানা রয়েছে। বছরে কমপক্ষে এক কোটি বোতল ফেনসিডিল বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। প্রতিবেদনে ফেনসিডিল উৎপাদনকারীদের নামও জানা গেল। দুর্ভাগ্য হচ্ছে পুরো ব্যাপারটি ঘটছে ভারত সরকারের নজরদারিতে। ফেনসিডিল বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করছে। সীমান্তের এসব কারখানা ধ্বংসে ভারত কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বন্ধু হিসেবে ভারত এ ক্ষতি বাংলাদেশের কোনোভাবে করতে পারে না। আমরা আশা করব, এসব ফেনসিডিল কারখানা বন্ধে ভারত অচিরেই পদক্ষেপ নেবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবাসহ আরো কিছু ক্ষতিকর মাদক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কিন্তু ভারত সীমান্ত দিয়ে যে আগের মতোই ফেনসিডিলসহ আরো বিভিন্ন ক্ষতিকর মাদক ঢুকছে সে ব্যাপারে কোনো আলোচনা-সমালোচনা নেই। প্রতিবেদনে ফেনসিডিল কারখানগুলোর অবস্থান এবং চোরকারবারি কোন পয়েন্ট দিয়ে হচ্ছে সেটি স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়েছে। আমাদের প্রশাসন এদের কোনোভাবে খুঁজে পাচ্ছে না। এটা বড় দুর্ভাগ্যজনক, আমরা সহযোগিতা করছি ভারতীয় ফেনসিডিল উৎপাদক ও চোরাকারবারিদের। আর ধ্বংস করছি নিজেদের যুবসমাজকে। আমরা মনে করি, প্রশাসন চাইলে ফেনসিডিল চোরাকারবার অনেকটা বন্ধ করতে পারে। আর কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সীমান্তে ফেনসিডিল কারখানা বন্ধে ভারতকে জোরালো অনুরোধ করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement