২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রোহিঙ্গা তরুণীর সংগ্রাম

শিক্ষার দুয়ার হোক অবারিত

-

রহিমা আক্তার খুশি বা রাহি খুশি, একজন রোহিঙ্গা তরুণী। নারকীয় নির্যাতনের মুখে মিয়ানমারে নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে বাবা-মায়ের হাত ধরে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তিনি। কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত আশ্রয়শিবিরে ৩৪ হাজার রোহিঙ্গার সাথে বৈধ শরণার্থী হিসেবে বসবাস করেন।
শরণার্থী শিবিরের অনিশ্চিত জীবনে যখন কেবল টিকে থাকার, অস্তিত্ব রক্ষার নিরন্তর কঠিন সংগ্রাম, একমুঠো খাবারের জন্য মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে কাতর প্রতীক্ষা, এমন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেও এই তরুণী নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করেছেন। এ যে ক্ষুদ্র একটি জীবনে কত বড় সংগ্রামের দৃষ্টান্ত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে ওই তরুণীকে নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে। এতে করে তিনি আলোচনায় আসেন। জার্মানির আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলেতে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রহিমা আক্তার উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে একটি এনজিওর কর্মী হিসেবে স্বদেশী রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। এরপরই গত ৬ সেপ্টেম্বর তার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
শরণার্থীদের বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোহিঙ্গা পরিচয়ে শিক্ষা লাভের কোনো সুযোগ নেই। এর অর্থ, তাদের শিক্ষার সুযোগ একেবারেই সীমিত। পুরনো শিবিরগুলোতে কিছু অনানুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু আছে। কিন্তু নতুন শিবিরগুলোতে এখনো সে রকম কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয়নি। অথচ সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের উপযোগী বয়সের রোহিঙ্গা শিশুর সংখ্যা অন্তত আড়াই লাখ। তাদের মধ্যে মাত্র ৩০ শতাংশ শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে। বাকি ৭০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে শিক্ষাবঞ্চিত।
এ পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের সব প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে রাহি খুশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে ঢুকতে পেরেছেন, এটা তার এক বিরাট সাফল্য বলেই মনে করা যায়। বাংলাদেশের যেকোনো মেয়ে এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলে আমরা তাকে ‘অদম্য মেধাবী’ অভিধা দিয়ে পত্রিকায় খবর ছাপাতাম ছবিসহ। খুশির জীবনে খুশির তেমন খবর আসেনি, বরং উল্টোটাই ঘটেছে। ‘রোহিঙ্গা পরিচয় গোপন করে’ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া; অবৈধভাবে শিক্ষার সুযোগ নেয়ার বিষয়গুলো মিডিয়ায় এসেছে। ফলাও করে তুলে ধরা হয়েছে তার এই সুযোগ নেয়ার বিষয়। এমনই সমালোচনার মুখে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিবিআইইউ) সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছে খুশিকে।
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। এই অধিকার থেকে কাউকে কখনো বঞ্চিত করা উচিত নয়। শিক্ষার অধিকার হরণ করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
রাহি খুশির এই ঘটনা স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত। অনেকেই পরিচয় লুকিয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ নেয়ায় সমালোচনা করেছেন তার। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ তার শিক্ষা লাভের সুযোগ অবারিত করার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন, এটিকে ‘একটি মৌলিক মানবাধিকার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা।
আমরা আশা করব, অন্তত খুশিকে বৈধভাবে শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দেয়া হবে এবং বাংলাদেশ যে শিক্ষার অধিকার হরণকারী কোনো দেশ নয়, এই সত্য প্রতিষ্ঠা করা হবে। আমাদের ধারণা, খুশির এই উদাহরণ আমাদের সমাজের অসংখ্য শিশু ও নারীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে।


আরো সংবাদ



premium cement