২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পবিত্র আশুরা আজ

সত্য ও ইনসাফের পক্ষে দাঁড়াতে হবে

-

প্রতি বছরের মতো আবার এসেছে পবিত্র আশুরা। ইসলামী পঞ্জিকা বা হিজরি বর্ষের পয়লা মাস মহররমের ১০ তারিখে বিশ্ব মুসলিম যথাযথ মর্যাদার সাথে অতীব গুরুত্ববহ দিনটি পালন করে থাকে। ১০ মহররমে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে মানবজাতির ইতিহাসে। তবে গত চৌদ্দ শ’ বছরে কারবালার বিয়োগান্ত ও মর্মন্তুদ উপাখ্যান আশুরাকেন্দ্রিক আলোচনায় মূল প্রতিপাদ্য হয়ে উঠেছে। তখনকার সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতার অনেক ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যের কারণে আশুরার দিবসে কারবালায় হোসেন রা:-এর শাহাদতের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা এতটুকু হ্রাস পায়নি। সত্যের স্বার্থে শিশুপুত্র ও সহচরসমেত জীবন বিলিয়ে দিয়ে সর্বোচ্চ ত্যাগের নজির রেখে গেছেন তিনি। তবু অত্যাচারী শাসকের অন্যায় চাওয়ার কাছে মাথানত করেননি। তাই বেইনসাফ ও অসত্যের বিরুদ্ধে জানপ্রাণে সংগ্রাম করে যাওয়ার চিরকালীন আহ্বান হচ্ছে আশুরার প্রধান মর্মবাণী।
সেই প্রাচীনকাল থেকে আশুরার পবিত্র দিনে আল্লাহ তায়ালা এমন অনেক ঘটনা সংঘটিত করেছেন, যা বিশেষত ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের জানা অত্যাবশ্যক। অতীত থেকেই নামাজ-রোজাসহ নফল ইবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিমাত্রই আশুরা পালন করে আসছেন। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, আশুরার দিনটিতে যেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছিল, এর মধ্যে আছেÑ প্রথম মানব আদম আ:-এর তাওবা কবুল হওয়া, মহাপ্লাবন থেকে নূহ আ:-এর মুক্তি, সদলবলে অত্যাচারী ফেরাউনের সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়া এবং এভাবে মুসা আ: ও তার অনুসারীদের মুক্তি লাভ, মাছের পেট থেকে ইউনূস আ:-এর পরিত্রাণ, ইব্রাহিম আ:-এর জন্ম, কূপের অন্ধকার গহ্বর থেকে ইউনূস আ:-কে উদ্ধার, ইয়াকুব আ:-এর দৃষ্টিশক্তি প্রত্যাবর্তন, দাউদ আ:-এর তাওবা কবুল, ঈসা আ:-এর জন্ম এবং আকাশে উত্থান, আল্লাহর কাছ থেকে রাসূল সা:-এর পূর্ণাঙ্গ ক্ষমাপ্রাপ্তি প্রভৃতি। এ দিনেই আইয়ুব আ:-এর দীর্ঘকালীন ও জটিল রোগমুক্তি, সুলাইমান আ:-কে রাজত্ব ফিরিয়ে দেয়া এবং ইদ্রিস আ:-কে জীবিতাবস্থায় আসমানে তুলে সম্মান প্রদানের ঘটনাও ঘটেছিল। মহররম তথা আশুরা তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে ধর্মপ্রাণ মুসলমান সবাই রোজা পালন করে থাকেন। তাদের প্রত্যাশা আল্লাহর রহমত ও বরকতের ফল্গুধারায় সিক্ত হওয়া।
প্রখ্যাত চিন্তাবিদ ও কবি মাওলানা মোহাম্মদ আলী জওহর বলেছেন, ‘কতলে হোসাইন আসল মেঁ মর্গে ইয়াজিদ হ্যায়/ ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হর কারবালা কি বাদ’ (হোসেন রা:-এর হত্যাকাণ্ড আসলে ইয়াজিদেরই মৃত্যু। প্রতি কারবালার ঘটনার পরে ইসলাম প্রাণ ফিরে পায়)। অর্থাৎ ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্যানুসারী সাহসী সংগ্রামী হজরত হোসেন রা:-কে হত্যার মাধ্যমে মূলত অত্যাচারী-একনায়ক ইয়াজিদের মিথ্যা ধ্যানধারণা তথা অন্যায়-অনাচারেরই পরাজয় ঘটেছে। কারবালার মতো ট্র্যাজেডিগুলোতে অপরিমেয় ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করার মধ্য দিয়ে ইসলামের অনুসারীরা তাদের আদর্শিক নবজীবন লাভ করেন। এভাবেই যুগে যুগে ইসলামের অবিনশ্বর চেতনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
পবিত্র আশুরার শিক্ষা হলো, জীবনের সর্বস্তরে যেকোনো মূল্যে আল্লাহপ্রদত্ত অর্থাৎ রাসূল সা:-এর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ইসলামকে দুনিয়ায় বিজয়ী আদর্শরূপে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। আজ আত্মসমালোচনা করা উচিত, আশুরা নিছক দায়সারাভাবে পালিত হচ্ছে কি না। মনে রাখতে হবে, সর্বোচ্চ মাত্রার ত্যাগের মাধ্যমে ইসলামকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাস্তবায়নের যথাসাধ্য প্রয়াসেই আশুরা পালনের সার্থকতা নিহিত।

 


আরো সংবাদ



premium cement