২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আয়বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায়ে

জনগণের স্বার্থে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

-

বাংলাদেশে ধনী-গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্য প্রকট হয়ে উঠেছে। ২০১০ সালে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীর আয় ছিল জিডিপির দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা ২০১৬ সালে মাত্র দশমিক ২৩ শতাংশে নেমে এসেছে। আর ২০১০ সালে দরিদ্রতম ১০ শতাংশ জনসংখ্যার মোট আয় ছিল জিডিপির ২ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে মাত্র ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশে নেমে গেছে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তাদের তথ্য-উপাত্তে ধনীদের আয় বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাটি এর বিপরীত। কিছু মানুষের আয় ও সম্পদ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে। অন্য দিকে, সরকারের পক্ষ থেকে দেশে প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়নের খবর প্রচার করা হচ্ছে। দেখানো হচ্ছে, উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান। এ পরিসংখ্যান কোনো কাজে আসবে না, যদি দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীর আর্থিক দুর্গতির অবসান না হয়।
অর্থনীতি সমিতির সেমিনারে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম মূল প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আয়বৃদ্ধির হার বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে। মাত্র ২৫৫ জন ব্যক্তির কাছে দেশের বেশির ভাগ সম্পদ আটকে আছে। বছরে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে ৭৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ড হোম’ ও কানাডায় গড়ে উঠছে ‘বেগম পাড়া’। অন্য দিকে, বৈষম্যমূলক আয় বাড়ায় রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ শিল্প, টিভি চ্যানেল, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমা, হোটেল-রেস্তোরাঁ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা খাত দ্রুত বর্ধনশীল এ দেশে। এগুলোতে ভর করে কিছু মানুষের পোয়াবারো। জনমানুষের অবস্থার সাথে এগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই।
এদিকে, কৃষিতে চলছে দুরবস্থা। কৃষকদের জীবনে উন্নতির বদলে অবনতি হচ্ছে। তাদের জীবনে নেমে আসছে চরম দারিদ্র্য। ধনকুবেরদের বেশির ভাগই গার্মেন্ট শিল্পের মালিক। কিন্তু ৩৫ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের জীবনে তেমন পরিবর্তন আসেনি। এদিকে দেশে জিডিপির হার দেখানো হচ্ছে ৮ শতাংশের উপরে। বলা হচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ শীর্ষে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সম্প্রতি বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, আয়বৈষম্য বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন পুরোটাই অর্থহীন হয়ে যাবে, যদি এর সুফল জনগণের পর্যায়ে না পৌঁছে। উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে ধনাঢ্য ১০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর দখলে ২০১০ সালে ছিল মোট জিডিপির ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। ২০১৬ সালে দেখা গেছে, ধনাঢ্য মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে জিডিপির ২৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আরো জানানো হয়, বাংলাদেশে গত পাঁচ বছরে ধনকুবেরের বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে চিত্র সরকার দেখাচ্ছে, এর সুফল মূলত সামান্য কিছু মানুষের উদরে ঢুকছে। একই সাথে দেশে অব্যাহত উচ্চ দুর্নীতির সম্পর্ক গভীর, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ফলে মুদ্রা পাচারের শীর্ষে পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। আর অর্থনীতি এমন জায়গায় সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা বেশির ভাগ মানুষের কোনো কাজে আসছে না। এ অবস্থার পরিবর্তনে প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। প্রথমেই তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে দুর্নীতি দমনে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কারা এই দুর্নীতি দমন করবেন? যারা নীতিনির্ধারণের জায়গায় রয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধেই আসছে অভিযোগ। এখন সংসদের ৬২ শতাংশ সদস্যই ব্যবসায়ী। অর্থবিত্তের জোয়ার বইছে উঁচু স্তরের ব্যবসায়ীদের ঘিরে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নকে দেশের জনমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হলে বাস্তবে কিছু দৃঢ়পদক্ষেপ নিতে হবে। সেই দৃঢ়তা দেখানোর জন্য সরকার এখনো প্রস্তুত নয় বলেই মনে হচ্ছে। আমরা মনে করি, এ অবস্থার আশু পরিবর্তন দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement