২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গণসাক্ষরতা

অন্ধকারে ডুবে আছে পুরো কার্যক্রম

-

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও রোববার পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস’। সাক্ষরতার হার শতভাগ অর্জনের সব অঙ্গীকার অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে। বর্তমান সরকার উপর্যুপরি তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরও এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি; বরং এবার সাক্ষরতা দিবসে এক অন্ধকার চিত্র আমাদের সামনে ভেসে উঠেছে।
শিক্ষা খাতে কর্মরত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সাক্ষরতা অর্জনের গতি বছরে মাত্র শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। এই হারে অগ্রগতি হলে সাক্ষরতায় দক্ষতার প্রাথমিক স্তরে পৌঁছতেই বাংলাদেশের সব নাগরিকের আরো ৪৪ বছর এবং অগ্রসর পর্যায়ে উন্নীত হতে ৭৮ বছর লেগে যাবে।
পত্রপত্রিকার রিপোর্ট থেকে এটা স্পষ্ট, গত এক যুগেও সাক্ষরতার হার বাড়াতে তেমন কোনো পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়নি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নিরক্ষরমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল।
সরকারের তরফে দাবি করা হচ্ছে, দেশে সাক্ষরতার হার এখন ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এই হার মাত্র ৫৭ শতাংশ। কবে নাগাদ দেশ নিরক্ষরমুক্ত হতে পারবে, বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের জরিপে সাক্ষরতার হারের এই বিপুল ব্যবধানের কারণ হলোÑ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের জরিপে কোনো ব্যক্তি লিখতে পড়তে পারেন বলে দাবি করলেই তাকে ‘সাক্ষর’ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অন্য দিকে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জরিপের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সত্যিই লিখতে ও পড়তে পারেন কি না, সেটা পরীক্ষা করে দেখা হয়। ফলে সরকারিভাবে প্রকাশিত, সাক্ষরতার হার নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
সাক্ষরতা বলতে লিখতে, পড়তে এবং গণনা ও যোগাযোগ স্থাপন করার সক্ষমতা বোঝানো হয়। সাক্ষরতাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিকে বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণী পাস করা শিক্ষার্থীর সমমানের হতে হবে বলে মানদণ্ড নির্ধারণ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এই মানদণ্ডে ফেলে যাচাই করা হলে দেশের সাক্ষরতার হার ৫০ থেকে ৫১ শতাংশের বেশি হবে বলে মনে হয় না। বেসরকারি সংস্থা ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ ২০১৬ সালে সাক্ষরতার হার নিয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ। বছরে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে অগ্রগতির হিসাব ধরা হলে সেটা ৫১ বা ৫২ শতাংশে পৌঁছবে কি না সন্দেহ।
এই যখন সাক্ষরতার চিত্র, তখন বাংলাদেশে এবারের সাক্ষরতা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, ‘বহু ভাষায় সাক্ষরতা উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা।’ এটি নিঃসন্দেহে একটি হাস্যকর প্রস্তাব। যেখানে মানুষ নিজের ভাষায় লেখা একটি চিঠি পড়ার যোগ্যতাও অর্জন করতে পারছে না, সেখানে তার কাছে বহু ভাষায় সাক্ষরতার প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা বালখিল্যের পর্যায়ে পড়ে।
সাক্ষরতার হার নিয়ে যখন এই অর্বাচীনসুলভ কর্মকাণ্ড চলছে তখন অনেকে মনে করতে পারেন, দেশে অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কারণে সম্ভবত উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই উন্নতি করেছে। কিন্তু সেখানেও কোনো ইতিবাচক চিত্র আমরা দেখতে পাই না। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের তথ্য বলছে, উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থার মানের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। আর বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে উচ্চশিক্ষার মানের দিক দিয়ে ১৩৬টি দেশের মধ্যে আমাদের দেশের অবস্থান ৮৪তম। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে ভারত। তালিকায় তাদের বৈশ্বিক অবস্থান ২৯তম। বাকি দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৪১, পাকিস্তান ৭১ ও নেপালের অবস্থান ৭৭তম। এই চিত্র রীতিমতো উদ্বেগজনক নিঃসন্দেহে।
সাক্ষরতা অর্জনের জন্য তেমন কোনো প্রকল্প সরকারের হাতে নেই। ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪ জেলা)’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লাখ নিরক্ষরকে সাক্ষরতা প্রদানের লক্ষ্যে ৪৫২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। কিন্তু এটি এরই মধ্যে বিভিন্ন ভুঁইফোড় এনজিওর অর্থ ‘লুটপাটের একটি কার্যক্রম’ বলে চিহ্নিত হয়েছে।
সুতরাং, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য শতভাগ সাক্ষরতা নিশ্চিত করার যে লক্ষ্য সরকারের সামনে রয়েছে, তা শেষ পর্যন্ত গোঁজামিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় কি না সেই সন্দেহ থেকেই যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
ক্রিকেট খেলতে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছে দেওয়ানগঞ্জের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শিহাব কিশোরগঞ্জে বৃষ্টির জন্য বিশেষ নামাজ সাতক্ষীরা বৈদ্যুতিক খুটিতে ধাক্কা লেগে মোটরসাইকেলআরোহী নিহত বার্সেলোনাতেই থাকছেন জাভি চতুর্থ দফা ‘হিট অ্যালার্ট’ জারি : এবারের তাপদাহ শেষেই বৃষ্টিপাতের আশা ফরিদপুরে বৃষ্টির জন্য নামাজে হাজারো মুসুল্লির কান্না পোরশার নোচনাহারে আগুনে ৩টি দোকান পুড়ে গেছে খুলনা বিভাগ ও ৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ ‘১ টাকার কাজ ১০০ টাকায়, ৯৯ যায় মুজিব কোটে’ রাত পোহাতেই রুদ্ধদ্বার অনুশীলন শুরু বাংলাদেশের সাটুরিয়ায় প্রশান্তির বৃষ্টি চেয়ে সালাতুল ইসতিসকা আদায়

সকল