২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রেলওয়ের প্রকল্পে ভুতুড়ে ব্যয়

দুর্নীতির জোয়ার বইছে চার দিকে

-

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জনগণের একটা টাকা মেরে খাবেনÑ এটা চিন্তাও করতেন না একসময়। সেই উন্নত অবস্থান থেকে প্রথম যখন দুর্নীতির যাত্রা শুরু, তখন সেটি ছিল অত্যন্ত গোপনীয় একটা বিষয়। একটা টাকা তসরুপ করলে সেটি যদি জানাজানি হয়ে যায় তাহলে তসরুপকারী মুখ দেখাতে লজ্জা পেত। ক্রমেই এই লাজলজ্জা ছেড়ে দুর্নীতিবাজেরা এখন একেবারে প্রকাশ্যে চলে এসেছে। জনগণের অর্থ লোপাট করে দুর্নীতিবাজেরা এখন বুক ফুলিয়ে চলে। অবৈধ অর্থের জোরে ধরাকে সরা জ্ঞান করে তারা। দুর্নীতি এখন এতটাই প্রকাশ্যে চলে এসেছে যে, প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়ে গেছে। এখন একেবারে কাগজ কলমে উল্লেখ করে দুর্নীতি করা হচ্ছে। আমরা দেখলাম একটি পর্দার দাম ৩৭ লাখ টাকা। বালিশের দাম দেখা গেল প্রায় ছয় হাজার টাকা। আবার সেটি উত্তোলনের খরচ দেখানো হলো ৭৬০ টাকা। প্রত্যেকটি দুর্নীতির ক্ষেত্রে সরকার থেকে প্রতিপক্ষের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হয়। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে আশকারা পেয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিবাজেরা।
বর্তমান সময়ে দুর্নীতির বিশাল একটি ক্ষেত্র রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প। নয়া দিগন্ত এক বিস্তারিত প্রতিবেদনে রেলওয়ের একটি প্রকল্পে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ সম্পর্কে খবর দিয়েছে। রেলওয়ের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে প্রস্তুতিমূলক কারিগরি সহায়তা মূলত একটি কারিগরি প্রকল্প। যা মূল প্রকল্প বাস্তবায়নের সহায়ক। যেখানে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন, দরপত্র ডকুমেন্ট প্রস্তুত ও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ রয়েছে। এসব কাজের বেশির ভাগই অদৃশ্য, এগুলো কার্যত হয়েছে কি হয়নি সেটি তদারকি করা দুরূহ। প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, এ প্রকল্পে পরামর্শক থাকবে এক হাজার ৫৩০ জন। এদের মধ্যে বিদেশী পরামর্শক এক হাজার ১৫৩ জন, স্থানীয় ৩৭৭ জন। হাওয়াই প্রকল্পে এতজন পরামর্শক কিভাবে কাজ করবেন সেটি একটা বড় প্রশ্ন। বিদেশী পরামর্শকদের বেতন হবে ১৬ লাখ টাকা। পরামর্শকদের গাড়িভাড়া বাবদ খরচ চার কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এ প্রকল্পে ক্লিনারের বেতন। মাসে একজন ক্লিনার পাবেন চার লাখ ২০ হাজার টাকা। অফিস সহকারীর বেতন ধরা হয়েছে ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা। প্রকল্পের এমন ভুতুড়ে ব্যয়ের প্রস্তাব দেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে ধারণা পাওয়া যায়। এ দেশে প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে, না লুটপাট হচ্ছে সেই ধাঁধায় পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক প্রকল্পের লক্ষ্য থাকে জনগণের উন্নয়ন। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে সেগুলোর প্রধান লক্ষ্য হয়ে উঠছে যেন কিছু লোকের জন্য লুটপাটের দরজা খুলে দেয়া। ফলে জনগণের জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত না হলেও কিছু লোক ফুলে-ফেঁপে উঠছে। বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থ বাইরে পাচার হয়ে যাওয়ার খবর রয়েছে। এসব টাকা এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে লুটপাট হয়ে যাওয়া টাকা কি না, সেটি তদন্ত করে দেখা যেতে পারে।
রূপপুর পরমাণু প্রকল্পে ভুতুড়ে ব্যয়ের কারিগরদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে মানুষ জানে না। যারা একটি বালিশ ছয় হাজার টাকা দিয়ে কিনে আবার সেটি বাসায় উঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ করেছে, তাদের শাস্তি না হলে একই ধরনের দুর্নীতি করার জন্য অন্যরা উৎসাহিত হবে। রেলওয়ের প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতির খবর সবার জানা। অন্য দিকে, রূপপুর প্রকল্পটিই একটি বিতর্ক তৈরি করেছে। সেখানে সাগরচুরি বাংলাদেশের দুর্নীতির ব্যাপারে নতুন মাইলফলক উন্মোচন করে দিলো যেন। উৎসাহিত হয়ে এখন রেলওয়েসহ প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পে ভুতুড়ে খরচের প্রস্তাবনা তৈরি হচ্ছে। এই দুর্নীতিকে যদি ঠেকানো না যায় তাহলে উন্নয়নের বদলে এ দেশ একদিন দেউলিয়া হয়ে যাবে। নীতিনির্ধারকদের ব্যাপারটি উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement