১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এবার দখল করা হচ্ছে মেঘনা!

নদ-নদী অবশ্যই রক্ষা করতে হবে

-

বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, কর্ণফুলীর পরে দেশের অন্যতম প্রধান নদী, মেঘনা জবরদখলের তাণ্ডব শুরু হয়ে গেছে। একটি সহযোগী দৈনিকের লিড নিউজে ছবিসহ তুলে ধরা হয়েছে এর বিস্তারিত বিবরণ। এই প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘নদী ভরাট করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, কলকারখানা, ডকইয়ার্ড ও বাড়ি নির্মাণের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে মেঘনা নদী। এর কোনো সীমানা-পিলার না থাকায় বড় বড়শিল্প প্রতিষ্ঠান ইচ্ছামতো নদী দখল করে কলকারখানা তৈরি করছে। দেড় মাস আগে লঞ্চঘাট এলাকায় দোকানপাটসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও কয়েক দিন না যেতেই আবার অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগের মতো মেঘনা নদীও হারানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।’
মেঘনার দু’তীরের সরেজমিন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পত্রিকাটি জানিয়েছে, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পুরনো লঞ্চঘাট, মেঘনা লঞ্চঘাট এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে অনেক স্থানে মোট শতাধিক স্থাপনা অবৈধভাবে নদীতীর ভরাট করে নির্মাণ করা হয়েছে। সোনারগাঁওয়ের বহু স্থানে বড় অনেক প্রতিষ্ঠানের নদীতীরের জায়গা দখলের অভিযোগ রয়েছে। মেঘনা ও মেনিখালি নদীর এবং এগুলোর তীরবর্তী দুই কিলোমিটার জায়গা বালু ভরাটের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের তিন প্রধান নদী পদ্মা, যমুনা, মেঘনার একটি হলো, বৃহত্তর সিলেট থেকে ভৈরব হয়ে চাঁদপুর দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদী। একপর্যায়ে পদ্মা নদীর প্রবাহ যোগ হয়ে মেঘনার বিশাল স্রোতোধারা সুপ্রশস্ত মোহনার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে পড়ছে।
জানা যায়, গজারিয়া মুখ থেকে বেঙ্গল সিমেন্ট কারখানা পর্যন্ত মেঘনা নদী নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দরের আওতাভুক্ত। তবে এই অংশের নদীতীরের বেশির ভাগ জায়গা স্থান দখল করে গড়ে উঠেছে ডকইয়ার্ড, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, তেল ও বালুর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতি; কিন্তু মেঘনার তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা আজো সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিএ জানে না। কারণ, তাদের কাছে এ সংক্রান্ত তালিকা নেই। এমনকি, নদীতীরে কোনো সীমানা পিলার এত দিনেও স্থাপিত হয়নি। এ অবস্থায় উচ্ছেদ অভিযান কার্যকর হতে পারছে না। বিআইডব্লিউটিএ’র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মেঘনার দু’পাড়ে কয়েক দিন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ ‘একটু দুষ্ট টাইপের। উচ্ছেদ করার পর তারা আবার অবৈধভাবে দখল করে নেয়।’ একই সূত্রে জানানো হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানের জনবলের স্বল্পতার দরুন নিয়মিত মনিটরিং করা যায় না। দু’তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণ না করা পর্যন্ত অবৈধ দখলবাজি বন্ধ হবে না।’
এলাকাবাসী জানান, উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো অংশ কখনো উচ্ছেদ করা হয় না। লঞ্চঘাটের এক দোকানি দাবি করেন, ‘ঘাটের সব দোকানপাট অবৈধ যেগুলো সরকারি জায়গাতে স্থাপিত। এসব দোকান উচ্ছেদের পরে আবার বসানো হয়। বড় প্রতিষ্ঠানের কোনো কিছু উচ্ছেদ করা হয় না। কারণ, তাদের হাত অনেক বড়, সরকারও তাদের কাছে অসহায়। নদী ভরাট করে বিরাট শিল্প স্থাপনা গড়ে উঠলেও সরকার দেখেও না দেখার ভান করে।’ এ দিকে, নদীতীরের কলকারখানার বর্জ্যরে দূষণে নদীর মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, ‘মেঘনার সীমানা-পিলার না থাকায় অনেক ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নদীর জায়গা নিজের করে নিচ্ছে।’
সবার প্রত্যাশা, মেঘনাসহ দেশের যেকোনো নদী বা জলাশয়ের অবৈধ দখল স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য সরকার সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কার্যক্রম যাতে সম্পূর্ণ সফল হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement