২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মহাসড়কে টোল আদায়

মানুষের কাঁধে চাপবে বাড়তি বোঝা

-

দেশের মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চালিয়ে যেতে টোল দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। একনেক সভায় দেয়া এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, মহাসড়কগুলো টোল সিস্টেমের আওতায় আনতে হবে। এখন থেকে জাতীয় মহাসড়কের সেতু ছাড়াও সড়কের ওপর টোল বসানো হবে। বিদেশের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, ‘সেখানে মহাসড়কগুলোকে বিভিন্ন সেকশনে ভাগ করা হয়। ধরুন, ২০০ মাইল রাস্তা। প্রত্যেক ৫০ মাইল রাস্তায় একটা গেট থাকে। স্থানীয় গাড়িগুলো ১০ মাইল গিয়ে আরেক রাস্তায় গেলে টোল দিতে হবে না। লং ডিসট্যান্স ট্রাভেলারদের জন্য এটা প্রযোজ্য হবে।’
বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতায় সড়ক রয়েছে ২১ হাজার ৫৯৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে তিন হাজার ৯০৬ কিলোমিটার ‘জাতীয় মহাসড়ক’। যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক।
মহাসড়কে টোল আদায়ের এই কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালেই সরকার এ ধরনের একটি নীতিমালা তৈরি করেছিল। ২০১৪ সালের মার্চে মন্ত্রিসভার এক বৈঠক শেষে সেই সময়ের মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়ক-মহাসড়ক এবং সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য টোল আদায়ের নীতিমালা তৈরি করেছে সরকার। এই টোলের পরিমাণ সর্বনিম্ন পাঁচ ও সর্বোচ্চ এক হাজার টাকা। বড় বাস-ট্র্রাকের পাশাপাশি সাইকেল ব্যবহারের জন্যও টোল দিতে হবে।
পরে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তখনকার সচিব বলেন, নতুন নীতিমালায় ২০০ মিটারের বড় সেতুতেই কেবল টোল আদায় করার কথা বলা হয়েছে। তবে এর চেয়ে ছোট যেসব সেতুতে এখন টোল আদায় করা হচ্ছে, সেখানে ইজারাদারের সাথে চুক্তি শেষ হলে আর নেয়া হবে না।
২০১৪ সালের নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের ভিত্তি টোল নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪০০ টাকা। অর্থাৎ, এসব সড়কে সাধারণ ট্রাক চালাতে ৪০০ টাকা টোল ধার্য করা হয়। আর ভারী ট্রাকের জন্য ভিত্তি টোলের পরিমাণ ৮০০ টাকা এবং ট্রেলারের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা ধার্য করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে বড় বাসের টোল ধরা হয় ভিত্তি টোলের ৯০ শতাংশ, মিনি ট্রাকের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ এবং মাইক্রোবাসের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ। ১৩টি শ্রেণীতে যানবাহনের জন্য আলাদা টোল নির্ধারণ করা হয়।
আমাদের ধারণা, ২০১৪ সালের ওই নীতিমালাই পুনর্বিন্যস্ত আকারে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সারা বিশ্বেই জাতীয় মহাসড়কে টোল আদায়ের প্রচলন আছে। তাই এ নিয়ে কারো কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়। নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত স্পষ্ট করেই বলেছেন, মহাসড়ক ব্যবহারে টোল আদায়ের উদ্যোগটা ভালো। কিন্তু সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে প্রশাসনিক দিকটা শক্তিশালী ও দক্ষ করার বিষয়ে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা চান অল্প সময়ে পণ্য শিপমেন্ট করতে। তারা বাড়তি টাকা দিতেও রাজি। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু না হলে ব্যবসায়ীরা টাকাও দেবেন আবার জ্যামেরও শিকার হবেন।
রফতানিকারক সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: হাতেম বলেছেন, উদ্যোগটা ভালো, কিন্তু এখন এটা বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। কারণ, দেশের রফতানি খাত বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতের পক্ষে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেতন, বিদ্যুৎ বিল এবং অন্যান্য খরচ সবই বেড়েছে। তার ওপর যদি এখন মহাসড়কে টোল আরোপ করা হয়, তাহলে আমাদের টিকে থাকা দুষ্কর হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, পরিবহনের লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে প্রতি বছর রোড ট্যাক্স দিতে হয়। তার ওপর মহাসড়কে টোল দিতে হলে ব্যবসা আর টিকবে না।
অর্থাৎ, এ ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের কাঁধে করের আরেকটি নতুন বোঝা চাপবে, তাতে সন্দেহ নেই। সে ক্ষেত্রে যানবাহনের লাইসেন্স নবায়নের সময় রোড ট্যাক্স আদায় বন্ধ রাখা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement