২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহ মাত্রা

মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ চাই

-

বাংলাদেশে অব্যাহতভাবে প্লাস্টিক দূষণ বাড়তে বাড়তে অত্যন্ত বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে। প্লাস্টিকসামগ্রীর মাধ্যমে সৃষ্ট পরিবেশদূষণের বিষয়টি মানুষসহ প্রাণিজগতের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তবুও সরকার প্লাস্টিকের ব্যবহারে সতর্কতা এবং এর সম্ভাব্য বিকল্পকে কাজে লাগানোসহ সংশ্লিষ্ট নিরাপদ ব্যস্থাপনার ব্যাপারে কার্যকর ও পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেয়নি।
একটি সহযোগী দৈনিকের লিড নিউজে এ সম্পর্কে জানানো হয়, বাংলাদেশের একটি সামাজিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের বিষয়ে কাজ করতে গিয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেখেছে, এ দেশের গ্রামাঞ্চলে মাত্র এক বছরে আট লাখ ২১ হাজার ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সৃষ্টি হয়েছে। অপর দিকে, প্রতি বছর দেশে দুই লাখ সাত হাজার ৬৮৫ টন প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালাসহ পানিতে। প্রতিষ্ঠানটি হিসাব করে দেখতে পায়, ১৯৯২ থেকে ২০১৪Ñ এই ২২ বছরে বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১৭ গুণ বেড়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ। আরো জানা গেছে, ২০০৫ সালে ঢাকা শহরে প্লাস্টিকের মাথাপিছু বার্ষিক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৫৬ কেজি। ২০১৭ সালে এটা দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ২৪ গ্রামে। এই জরিপ সম্পন্ন হয়েছে সরকারের পরিবেশ অধিদফতরের সহযোগিতায়। জরিপের ফলাফলের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, প্লাস্টিক বর্জ্যরে ৩৬ শতাংশ রিসাইকল বা পুনর্ব্যবহারের উপযোগী করা হলেও এর চেয়ে বেশি, ৩৯ শতাংশ ফেলা হয়েছে আবর্জনার ভাগাড়ে। এ দিকে, ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ২৯ শতাংশ পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠেছে। এসব প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন নদী দিয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশ সরকার গত বছর ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে প্লাস্টিক দূষণ দূর করার অঙ্গীকার করেছে। তবে আজো এ লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে বলছেন, দেশে পরিবেশদূষণ মোকাবেলার জন্য আইন ও নীতিমালা আছে; এ ক্ষেত্রে সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদনও করেছে। তবে প্রশাসনের উদাসীনতায় প্লাস্টিকের ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য কমছে না এবং এ ধরনের বর্জ্যরে যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে অবস্থা উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক রফিক আহমেদ বলেছেন, সরকার ১৭ বছর আগে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। তবে সাধারণ মানুষের অসচেতনতার দরুন এটা বন্ধ করা যায়নি। বুয়েটের অধ্যাপক ইজাজ হোসেন জানিয়েছেন, ‘প্লাস্টিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে অর্থনৈতিক হাতিয়ার ব্যবহার করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে। এর মধ্যে আছে, প্লাস্টিকের ওপর উচ্চ হারে করারোপ এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যের উৎপাদনকে প্রণোদনা জোগানো।’ পলিথিনসহ প্লাস্টিক দূষণের ক্ষেত্রে অনুসন্ধানকারী এনজিও, পরিবেশ ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার (এসডো) বক্তব্য, ‘প্যাকেজিংয়ের জন্য পলিথিনের নির্বিচার ও অপরিকল্পিত ব্যবহার এবং প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদনের ব্যাপারে নীতি না থাকার কারণে প্লাস্টিক বর্জ্যরে পরিমাণ হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিকল্প থাকা সত্ত্বেও প্লাস্টিক ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন ব্যবসায়ীদের অনেকেই।’
উল্লেখ করা দরকার, পলিথিন ছাড়া প্লাস্টিকের আর কোনো ব্যবহারের ওপর বাংলাদেশে বিধিনিষেধ নেই। অথচ পলিথিনের মতো মোট ৯টি ‘ডিরাইভেটিভ’ রয়েছে প্লাস্টিকের। বিশেষত ওয়ানটাইম বা সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক পণ্য এ মুহূর্তেই নিষিদ্ধ করা অপরিহার্য বলে ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত। প্রতিবেশী ভারতের সরকারও এবার এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
সবার প্রত্যাশা, পলিথিনসহ সব ধরনের প্লাস্টিক দূষণসমেত পরিবেশ ধ্বংসকারী যাবতীয় পণ্য ও প্রবণতা স্থায়ীভাবে রোধ করতে সরকার অবিলম্বে যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement