সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান কাম্য
- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা হয় গত শনিবার রাতে। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জঙ্গিগোষ্ঠীর অনলাইন তৎপরতা নজরদারির যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ এক টুইট বার্তায় জানায়, আইএস ওই হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে।
অবশ্য সাইট ইন্টেলিজেন্সের বার্তার সত্যতা নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় আছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার সোমবার একটি দৈনিককে বলেন, ‘আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য যে, সাইট ইন্টেলিজেন্স উদ্দেশ্যমূলকভাবে বলে, এটি বহুবার ও বহু আগেই প্রমাণ হয়েছে। সাইট ইন্টেলিজেন্সের কথার ওপর ভিত্তি করে কোনোভাবেই বলা যাবে না যে, আইএস ওই হামলা চালিয়েছে।’ ২০১৬ সালের জুলাই মাসে রাজধানীর গুলশানে হোলে আর্টিজানে হামলার আগে নাটোরের মুদি দোকানি সুনীল গোমেজ হত্যার পরও বলা হয়েছিল সেটি ‘আইএস করেছে।’ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএস বলতে কিছু নেই। গাড়ির চাকা ব্রার্স্ট হলেও বলে, আইএস করেছে। আবার ককটেল বিস্ফোরণ হলেও বলে আইএস করেছে। কারা যে এগুলো ছড়ায়, আমরা জানি না।’
গোয়েন্দারা সায়েন্স ল্যাবের ওই হামলাকে রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত হামলা বলছেনÑ এ কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এটি বড় কোনো হামলার ‘টেস্ট কেস’ হতে পারে। সম্ভবত ক্ষমতাসীন দলের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরেই পুলিশ প্রশাসন সারা দেশে পুলিশের কাছে সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে।
‘জঙ্গিবাদ’ বা উগ্রপন্থা বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে মোটামুটি স্বীকৃত একটি বিষয়। সে জন্য বাংলাদেশের সতর্ক থাকার দরকার আছে। কিন্তু আইএস এবং আল কায়েদার মতো বিশ্বব্যাপী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা সংগঠনগুলোর জন্মের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ হাত থাকার একটি তত্ত্ব মোটেই নাকচ করে দেয়ার মতো বিষয় নয়। সেটি যদি সত্য হয়, তবে মানতে হবেÑ বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ আসলেই একটি বানোয়াট ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু নয়। সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক, সিরিয়াসহ কয়েকটি দেশে কেবল যে লাখো মানুষ হত্যা এবং শতাব্দীর সবচেয়ে বড় লুটপাট চালিয়েছে তা-ই নয়; ওই দেশগুলোকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
যত দূর খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান টার্গেট সম্ভবত বাংলাদেশ বা বৃহত্তর অর্থে দক্ষিণ এশিয়া। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকেই জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে ‘জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ’ মোকাবেলায় সহযোগিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার সম্প্রতি বাংলাদেশকে জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে নতুন করে সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। শুধু তা-ই নয়, শক্তিধর দেশটি বাংলাদেশকে সামরিক বা প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিতেও আগ্রহ দেখাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদ দমন ও সহিংস জঙ্গিবাদ মোকাবেলাবিষয়ক ব্যুরোর আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয়ের উপসমন্বয়কারী জন টি গডফ্রে গত মাসে বাংলাদেশ সফরকালে নির্বাচিত কিছু গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের দিকে আইএস ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীর আগ্রহ আছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখন বলা হচ্ছে, দেশে জঙ্গি-সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। একই ধরনের বক্তব্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ও বলা হতো। এ নিয়ে তাদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায়। তাদের যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সহায়তা গ্রহণের আগে জাতীয় স্বার্থকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। সে কারণে এই বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সতর্ক ও কৌশলী হবেন এটাই দেশবাসীর কাম্য। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি প্রকাশ পেলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে। একই সাথে পুলিশ প্রশাসনের পর্যাপ্ত সতর্কতাও প্রত্যাশিত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা