২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ওয়াসার ৩৮ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

অনিয়ম দুর্নীতির তদন্ত জরুরি

-

রাজধানীবাসীর পানি সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ ওয়াসা। কিন্তু ঢাকার অনেক স্থানের বাসিন্দারা দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, ওয়াসার সরবরাহ করা পানি পান করা দূরের কথা; গৃহস্থালির কাজ করাও যায় না এ দিয়ে। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের সরবরাহ করা পানি শত ভাগ বিশুদ্ধ। এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পুরান ঢাকার জুরাইনের এক অধিবাসী ওয়াসার এমডিকে তার কার্যালয়ে সংস্থার সরবরাহ করা পানি দিয়ে শরবত বানিয়ে খাওয়াতে চেয়েছিলেন। তার সেই আশা পূরণ হয়নি। অবশ্য, শত ভাগ সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি থেকে একসময় পিছু হটতে বাধ্য হয় ওয়াসা।
শুষ্ক মওসুমে রাজধানীর অনেক জায়গায় পানিসঙ্কট দীর্ঘ দিনের। ঢাকাবাসীর পানিসঙ্কট সহনীয় পর্যায়ে আনতে মুন্সীগঞ্জের যশলদিয়া থেকে পদ্মার পানি পরিশোধন করে ঢাকা নগরীতে সরবরাহের প্রকল্প হাতে নেয় ওয়াসা। ওই প্রকল্পের কাজ আট মাস আগে শেষ হয়েছে। তবে এখনো তা চালু করা সম্ভব হয়নি। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হলে পাঁচ মিনিটেই পানির পাইপ ফেটে যায়। কম পুরুত্বের ও নিম্নমানের পাইপ ব্যবহারে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবহৃত পাইপ বুয়েটে পরীক্ষা করা হয়নি। এভাবেই লুটপাট ও অনিয়মে ডুবতে বসেছে ওয়াসার তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকার প্রকল্পটি। এতে সংস্থার শীর্ষপর্যায় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মাঠপর্যায়ে এ প্রকল্পের দুর্নীতি আরো দৃশ্যমান।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, নিম্নমানের বলে অভিযুক্ত এ ‘কে৯’ পাইপ সরবরাহ না করতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়ায় সরিয়ে দেয়া হয় প্রকল্প পরিচালককে। ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ওই চিঠি দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক। এ প্রকল্পের ব্যয় তিন হাজার ৫০৮ কোটি ৭৯ লাখ ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে দুই হাজার ৪২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ঋণ হিসেবে দেয় চায়না এক্সিম ব্যাংক। বাকি অর্থ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার ও ঢাকা ওয়াসা। ঋণের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংককে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। পরে এ প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে তিন হাজার ৮০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। ঋণের শর্তানুযায়ী চীনা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছাড়াও প্রকল্পে ব্যবহৃত পাইপ চীন থেকে আমদানির শর্তও জুড়ে দেয়া হয়।
পানি পরিশোধন করে পাইপ যশলদিয়া থেকে পদ্মা, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা নদী পার করে ঢাকায় আনতে হবে। তিনটি নদী পারাপারে চুক্তি মোতাবেক ২ দশমিক ৫ মিটার ব্যাসের কেসিং পাইপ বসানোর কথা ছিল। অথচ এ ক্ষেত্রে তা বসানো হয়নি। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো প্রকল্প। যশলদিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত পাইপলাইন বসানো হলেও ঢাকায় পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক প্রস্তুত করা হয়নি। ফলে নগরবাসী কবে নাগাদ পদ্মার পানি পাবেন, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। রাজধানীর বাবুবাজারের কাছে সায়েদাবাদ শোধনাগারের সরবরাহ নেটওয়ার্ক রয়েছে। এর ব্যাস ৬০০ মিলিমিটার। কিন্তু যশলদিয়া থেকে যে পাইপ ঢাকায় আসছে এর ব্যাস দুই হাজার মিলিমিটার। এটা দিয়ে যশলদিয়া থেকে পূর্ণ সক্ষমতায় পানি এনে সরবরাহ করা সম্ভব নয়। প্রকল্পটি চালু করা না গেলেও গত নভেম্বরে পরিশোধ করা হয় ঠিকাদারের ৯০ শতাংশ বিল। অথচ ঠিকাদারের এক বছরের নিশ্চয়তাকালের আট মাস চলে গেছে। বাকি চার মাসে প্রকল্প চালু না হলেও ঠিকাদারকে এ অর্থও পরিশোধ করতে হবে। পরে প্রকল্পে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দিলে দায় কে নেবে, এ প্রশ্নের জবাব মিলছে না।
আমরা মনে করি, ওয়াসার শেষ হওয়া এই বৃহৎ প্রকল্পে যে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সে সম্পর্কে সরকারের উচিত, উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা। ওই কমিটি খতিয়ে দেখবে কারা অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দুদকও এ প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়েছে কি না, তা তদন্ত করতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement