২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নাগরিকত্ব দেয়ার ভারতীয় নীতি

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে নীতিভ্রষ্ট করবে

-

আসাম রাজ্যের প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জি ভারতীয় শাসক দলের ধারণা ভুল প্রমাণ করল। তারা জোর প্রচারণা চালিয়েছে, প্রতিবেশী দেশ থেকে বহু মুসলমান ভারতে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের নিজেদের করা পঞ্জিকায় দেখা যাচ্ছে অবৈধভাবে আশ্রয় নেয়া মানুষেরা প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা মুসলমান নয়। এমনকি সীমান্তবর্তী যেসব জেলায় এমন মানুষের সংখ্যা বিপুল বলে জানানো হয়েছিল, সেটাও সঠিক নয়। সাম্প্রদায়িক প্রণোদনা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে করা নাগরিকপঞ্জি শাসক দলের মনোপূত না হওয়ায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা ক্ষেপেছেন। তারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন এ তালিকা নতুনভাবে করার জন্য সব কিছু তারা করবেন। যদিও তাদের এমন আহ্বান উচ্চ আদালত একবার পরিত্যক্ত করেছেন।
শনিবার প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, আসামের নাগরিকত্ব বাদ পড়া মানুষ ১৯ লাখ ছয় হাজার ৬৫৭ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে মুসলমান বাঙালিদের চেয়ে হিন্দু বাঙালির সংখ্যা বেশি। হিন্দু বাঙালির সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। অন্য দিকে মুসলমান বাঙালিদের সংখ্যা ছয় লাখের কিছু বেশি। তাই এই তালিকায় খুশি নয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি। নিজেদের উদ্যোগে করা এই তালিকার বিরুদ্ধে তারা বিষোদগার করছেন। একজন বিধায়ক তালিকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন, মুসলমানদের সুবিধা দিতে হিন্দুদের বিপদে ফেলার চক্রান্ত এটি। তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেন তিনি। ক্ষিপ্ত হয়ে বিজেপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, অপেক্ষায় থাকুন আরো তালিকার। অপেক্ষা করুন অন্য ব্যবস্থার। অর্থাৎ তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়াকে পছন্দ করছেন না। তাই তাদের অন্যায় অবৈধ পথে হলেও সুযোগ করে দেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। যদিও একটি দেশের নাগরিকদের নিয়ে এমন তালিকা করাই কোনোভাবে অসাম্প্রদায়িক বলা যায় না।
নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের কী করা হবে এ ব্যাপারটি স্পষ্ট করেনি ভারত সরকার। ‘সন্দেহভাজন’ নাগরিকদের জন্য আগে থেকেই রাজ্যে ডিটেনশন সেন্টার রয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে ‘নিজেদের নাগরিক নয়’ আখ্যা দিয়ে এমন আটক কেন্দ্রে আবদ্ধ করা ‘গণতান্ত্রিক’ ভারতের জন্য কতটা সম্মানের বিষয় হবে সেটা দেশটি ভেবে দেখতে পারে। এর মধ্যে নাগরিকত্ব হারানো ব্যক্তিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দেয়ার ব্যাপারে পরোক্ষভাবে হুমকি দেয়া হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি এমন হুমকি ধমকি দিয়ে ভোটার আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে আসামের নাগরিকত্ব সঙ্কটকে সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে গেছে। এনআরসির সাথে সম্পৃক্ত বিজেপির এক নেতা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসকে শেষ কথা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই বলে তালিকা প্রকাশের পর মন্তব্য করেন। বিজেপির চিন্তা যে দুরভিসন্ধিমূলক সেটা এই নেতার কথায় ইঙ্গিত রয়েছে।
বাদ পড়াদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান পরিচয় ছাড়াও বিহারি, নেপালি ও লেপচা নামের জনগোষ্ঠীও রয়েছে। তাই এ ধরনের নাগরিকপঞ্জি তৈরি এবং বিপুল জনগোষ্ঠীকে পরিচয়হীন করে দেয়ার নেতিবাচক প্রভাব অন্যান্য দেশের ওপরও পড়বে। বিশেষ করে বাংলাদেশ পাকিস্তানসহ সার্কের অন্যান্য দেশে নাগরিকপঞ্জি তৈরির উদ্যোগ শুরু হতে পারে। এর ফলে যারা নগারিকত্ব বঞ্চিত হবেন তাদের দায়দায়িত্ব কারা বা কোন কর্তৃপক্ষ নেবেন? যেখানে বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারত কিছু মানুষকে নিজেদের নাগরিক নয় বলে আখ্যা দিয়ে তাদের ব্যাপারে দায়দায়িত্বহীন হওয়ার দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড করছে।
উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ থেকে আগত সংখ্যালঘু হিন্দুদের আশ্রয় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার। একইভাবে নাগরিত্ব বিলে সংশোধনী এনে বাদ যাওয়া হিন্দুদের আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে নাগরিকত্ব হারাতে যাওয়া হিন্দুদের আশ্বস্ত করছে তারা। একটি দেশ ‘কেবল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর’ বসবাসের জায়গা হবে আধুনিককালে এমন রাষ্ট্র দেখা যাচ্ছে না। কেবল ধর্মীয় পরিচয় যদি একটি দেশের নাগরিক হওয়ার শর্ত হয় তাহলে কয়েক কোটি হিন্দুকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারতে ফিরে আসতে হবে। সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার বিজেপির যে নীতি সেটা পুরো বিশ্বের জন্য বাজে সাম্প্রদায়িক নজির সৃষ্টি হচ্ছে। এমন সঙ্কীর্ণ চিন্তা থেকে দেশটি সরে এলে সবার জন্য কল্যাণকর হবে।
এদিকে ১৯৫৫ সালের সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট সংশোধনের লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল লোকসভায় তোলা হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। যদি এই বিল পার্লামেন্টে পাস হয়, তবে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে যাওয়া শুধু মুসলমানেরা ছাড়া সংখ্যালঘু হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পার্সি অথবা খ্রিষ্টানরা ভারতের নাগরিকত্ব লাভের জন্য যোগ্য বিবেচিত হবে। এই বিলে এসব অভিবাসীকে ভারতে অবস্থানের সময়সীমা ১১ বছর থেকে কমিয়ে ছয় বছরে নামানো হয়। এ থেকে এটি সুস্পষ্ট, এনআরসি হালনাগাদ করার অন্তর্নিহিত অর্থ হচ্ছে, আসামে বসবাসরত সংখ্যালঘু মুসলমানদের সেখান থেকে বিতাড়িত করা।


আরো সংবাদ



premium cement
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দূত হলেন উসাইন বোল্ট ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৭ বাংলাদেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা হিট অ্যালার্ট নিয়ে আবহাওয়া অধিদফতরের নতুন বার্তা ভান্ডারিয়ায় পিকআপ চাপায় বৃদ্ধ নিহত হোচট খেল লিভারপুল, পিছিয়ে গেল শিরোপা দৌড়ে যোদ্ধাদের দেখতে প্রকাশ্যে এলেন হামাস নেতা সিনওয়ার! ফের পন্থ ঝড়, ঘরের মাঠে গুজরাটকে হারাল দিল্লি ইউক্রেনকে গোপনে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র গ্রেফতারের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ আরো বেড়েছে ইউক্রেন যুদ্ধে দুর্নীতি, পুতিনের নির্দেশে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী! 

সকল