২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বস্ত্র খাতে বিপর্যয় আসন্ন

অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে

-

বস্ত্র খাতের নানা সমস্যার কথা বহু দিন ধরেই আলোচনায় আছে। মানুষের অন্যতম মৌলিক চাহিদা এটি। যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের মানুষের বস্ত্রের চাহিদা পূরণ করেছে দেশেরই সাধারণ তাঁতি ও বয়নশিল্পীরা। একসময় বাংলার মসলিন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছিল। ঔপনিবেশিক শক্তি ইংরেজের ষড়যন্ত্র এবং স্থানীয়ভাবে সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে না পারায় মসলিন শিল্প বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের যে অভূতপূর্ব বিকাশ ঘটেছে, তাতেই কার্যত বাংলাদেশের দারিদ্র্যমুক্তির প্রাথমিক সোপান রচিত হয়। মোট জিডিপির ১৭ শতাংশের জোগান দিচ্ছে তৈরী পোশাক খাত। সৃষ্টি করেছে বিপুল কর্মসংস্থান, যার ফলে সমাজের মূলত হতদরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত মানুষই নতুন জীবনের দিশা খুঁজে পেল।
বস্ত্র খাতে এখন এক সঙ্কটকাল চলছে। বলা হচ্ছে, দেশীয় সুতা ও বস্ত্রনির্ভর এ খাত প্রায় ধ্বংসের পথে। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বন্ড সুবিধায় আনা বিদেশী সুতা-কাপড়ের কালোবাজারি বন্ধ না হওয়ায় স্থানীয় মিলের উৎপাদিত বস্ত্রপণ্যের বিক্রি মুখথুবড়ে পড়েছে। ছোট-বড় চার শতাধিক স্পিনিং মিলে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে আট লাখ টনেরও বেশি সুতা। কাপড়ের মিলগুলোর অবস্থাও একই রকম। এ কারণে বেশির ভাগ মিলমালিক ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না। খেলাপি হতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু সব জেনেও সরকারের দায়িত্বশীল মহল প্রায় নির্বিকার।
এর ফলে মাসের পর মাস লোকসান গুনতে গিয়ে ছোট মিলগুলোতে তালা ঝুলতে শুরু করেছে। বড় মিলগুলোও বন্ধ হওয়ার পথে। উপরন্তু, পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিদেশ থেকে সুতা ও কাপড় আমদানির নামে এলসি মূল্য বাড়িয়ে চলছে অবাধে অর্থপাচার।
সংশ্লিষ্টদের বরাত দিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, দেশের স্পিনিং মিলগুলোতে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। বাস্তবতা হলো, সঙ্কটের সমাধান না হলে কেউ ব্যাংকের টাকা শোধ করতে পারবে না। সে রকম আলামত শুরু হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে বেশির ভাগ মিল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মিলগুলো না বাঁচলে ব্যাংকও বাঁচবে না। কেননা, ব্যাংকের বেশির ভাগ বিনিয়োগ এ খাতেই।
বস্ত্র খাতসংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, সরকার এখন শুধু অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে মনোযোগী এবং কিছু ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এর সুফলভোগী। সব ক্ষেত্রেই তারা সুবিধা পাচ্ছেন। কিন্তু কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন থেকে অবদান রাখা বস্ত্র খাত নিয়ে কেউ ভাবছেন না।
অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এবং বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু এ জন্য অন্য শিল্প খাতকে অবহেলার শিকারে পরিণত করা হলে তা জাতীয় অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী হতে বাধ্য; বিশেষ করে সেটি যদি বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা বস্ত্র ও পোশাক খাত হয়ে থাকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘বস্ত্র খাত বর্তমানে যেসব সমস্যার মোকাবেলা করছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে শক্ত হাতে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের সুপারিশের মধ্যে রয়েছে প্রথমত দেশে যেসব ক্যাটাগরির সুতা উৎপাদিত হয়, সে ধরনের সুতা আমদানি এক বছরের জন্য পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত নগদ সহায়তার পরিমাণ ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে ১৫ শতাংশ করতে হবে। তৃতীয়ত আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে এ খাতের ব্যাংক ঋণ পুনর্গঠনসহ ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রহণযোগ্য সীমার গ্রেস পিরিয়ড নির্ধারণ করতে হবে।’
আমরা যতদূর জানি, বিদেশে আমাদের প্রতিযোগী বিভিন্ন দেশ বস্ত্র খাতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সুতরাং আমাদেরও তেমনি প্রণোদনা দিয়ে এই খাতটিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার উপযোগী রাখতে হবে। সরকার এ বিষয়ে সময় পেরিয়ে যাওয়ার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অবশেষে অধিনায়কের ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছল পাকিস্তান জাতিসঙ্ঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে আবার অর্থায়ন শুরু করবে জাপান শেখ হাসিনার অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি বিএনপিকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে : ওবায়দুল কাদের রাশিয়া সমুদ্র তীরবর্তী রিসোর্টে ১৬.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে সিরিয়ায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৬ সেনা সদস্য দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু অ্যানেসথেসিয়ার পুরনো ওষুধ বাতিল করে কেন নতুনের জন্য বিজ্ঞপ্তি! বাইডেনের মেয়াদে রুশ-মার্কিন সম্পর্কের উন্নতির কোনো আশা নেই : রুশ রাষ্ট্রদূত ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৪০ নিউইয়র্কে মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করবে যুক্তরাষ্ট্র! টাঙ্গাইলে লরি-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে নিহত ১

সকল