২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’

এ প্রবণতার অবসান জরুরি

-

রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন রাজধানী ঢাকায়। বিভিন্ন সময়ে গুম হওয়া আপনজনদের ছবি হাতে নিয়ে তাদের স্বজনেরা গুম হওয়া নিকটজনদের ফিরে পেতে চোখের জলে আকুতি-আহাজারি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। এই অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকারকর্মী ও গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ ওয়ার্কিং গ্রুপকে গুম সম্পর্কিত অভিযোগগুলো তদন্ত করার সুযোগ দিতে। উল্লেখ্য, সরকার এসব অভিযোগ তদন্ত করতে কিংবা বাইরের তথা জাতিসঙ্ঘকে তদন্ত করে দেখতে দিতে অস্বীকার করে আসছে। তারা সরকারের প্রতি আরো আহ্বান জানান ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন প্রটেকশন অব অল’ নামের কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করার জন্য।
গুম হওয়া পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষে গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আয়োজিত সভায় তাদের মায়েদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুম। অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ব্যক্তিদের একটাই আকুতি; মা ফিরে পেতে চান তার সন্তানকে, স্ত্রী চান স্বামীর সন্ধান, আর সন্তান দেখতে চায় তার বাবার মুখ। অনুষ্ঠানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষাবিদ এবং মানবাধিকারকর্মীরা বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্যে যুক্তিসঙ্গত কারণে সমালোচনা করেছেন সুশীলসমাজের সদস্যদের। তারা বলেন, শত শত গুম হওয়া মানুষের পরিবারগুলোর দুর্ভোগের প্রতি কথিত সুশীলসমাজের সদস্যদের কোনো সমবেদনা নেই। বক্তারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির দাবি অব্যাহত রাখেন। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ পরপর কয়েকবার ক্ষমতায় আসার পর যারা গুমের শিকার হয়েছেন, মূলত তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরাই এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই সরকার জনগণের সরকার নয়। তাই তারা জনগণের কথা ভাবেন না। যদি ভাবতেন, গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হতো অথবা গুমের সাথে জড়িতদের বিচার করা হতো। তারা একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে গুমের সব ঘটনার তদন্তের জোর দাবি জানান।
আমরা মনে করি, একটি সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে দেশের প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাই সর্বাগ্রে সরকারের উচিত গুমের প্রতিটি ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করে দেখা এবং এর জন্য দায়ী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অবিলম্বে বিচারের মুখোমুখি করা; কিন্তু সরকার শুধু গুমের কথা অস্বীকার করেই তার দায়-দায়িত্ব শেষ করতে চাচ্ছে। এর ফলে এখন দাবি উঠেছে, জাতিসঙ্ঘের আওতায় এসব ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বের করতে ও বিচার করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক হলে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে গুমের সব ঘটনার সুরাহা করা সম্ভব। তাই সবার প্রত্যাশা, সরকার অন্তত নিজের কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে অবিলম্বে এ কাজটি সম্পন্ন করবে। তা না হলে গুমের ঘটনা অব্যাহত থাকবে। ফলে আরো শত শত মা হারাবেন তার সন্তানকে; স্ত্রী হারাবেন স্বামীকে এবং বোন হারাবে ভাইকে। এটা কারো কাম্য হতে পারে না। সরকারের মনে রাখা দরকার, গুমের ঘটনার দায় সরকার কিছুতেই এড়াতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement