২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মেরুদণ্ড ভেঙে যাচ্ছে কৃষকের

পাটের ন্যায্যমূল্য হাতছাড়া

-

পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক। ধান ও চামড়ার পর পাট সংগ্রহে লেজেগোবরে অবস্থা দেখা দিতে পারে। বিজেএমসি প্রয়োজনীয় ক্রয়কেন্দ্র বা এজেন্সি নিয়োগ না দেয়ায় এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরকারি ২২টি পাটকলের জন্য সারা দেশে মাত্র ৪৮টি ক্রয়কেন্দ্র নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অথচ গত মওসুমে ছিল ৯৮টি। অর্থের বিনিময়ে অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ ক্রয়কেন্দ্র নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মিলগেট থেকে পাট সংগ্রহের সুযোগও রাখা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা মিল কর্তৃপক্ষকে খারাপ মানের পাট কিনতে বাধ্য করে থাকেন। ফলে ভালো আবাদ সত্ত্বেও এবার পাট সংগ্রহ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। পাটের দর আরো কমতে পারে। এতে কৃষক পাটের ন্যায্যমূল্য পাওয়া দূরের কথা, উৎপাদন খরচ তোলাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ক্রয়কেন্দ্র কম হওয়ায় পাট বিক্রি করতেও সমস্যায় পড়বেন তারা। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মওসুমে ছয় লাখ ৯৯ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আবাদ হয়েছে ছয় লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা যায়, বাজারে তোষা পাট বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকা মণ দরে। গত মওসুমের এ সময়ে একই মানের পাটের দর ছিল ২০০০ টাকা প্রতি মণ। দেশী জাতের পাট বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকা করে। গত মওসুমে ছিল ১৭০০-১৮০০ টাকা। জুলাইয়ের মাঝামাঝি দর কিছুটা ভালো ছিল। তবে যত দিন যাচ্ছে ততই দাম কমছে। গত মওসুমের তুলনায় এবার মণপ্রতি পাটের দাম ২০০-৩০০ টাকা কম। গত মওসুমে দেশে ৬২ লাখ ১৩ হাজার বেল পাট কেনাবেচা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ লাখ ৯ হাজার বেল কিনেছে বেসরকারি খাত। বাকি ১২ লাখ ২২ হাজার বেল কিনেছে সরকারি খাত।
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব বিজেএমসির। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কাঁচা পাট ক্রয় করে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি। পাটনীতিতে বলা হয়েছে, অন্তত ৩০ শতাংশ পাট বিজেএমএসির মাধ্যমে কিনতে হবে, যাতে কৃষক সরকারের কাছে পাট বিক্রি করতে পারেন। সরকার পাট কম সংগ্রহ করলে বাজারদর পড়তে বাধ্য। কারণ, বেসরকারি খাতও সেই সুযোগ নেবে। ভালো উৎপাদনের পরও চাহিদা কমলে দর কমার প্রবণতা থাকে। বেসরকারি পাটকল মালিকেরা দেশে এবং দেশের বাইরে চাহিদা কমে যাওয়ায় গত মওসুমের তুলনায় এ বছর পাট কম কেনার কথা চিন্তা করছেন। ফলে এবার পাটের দাম গত বছরের তুলনায় কম হবে। কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেলে পাট আবাদে আগ্রহ হারাবেন তারা। গত মওসুমে প্রকৃত কৃষকেরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাননি। এবার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়েও একই অবস্থা হয়। প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। পাটের ক্ষেত্রেও কৃষকদের একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। এসব ঘটনায় প্রান্তিক মানুষ বঞ্চনার শিকার। অপর দিকে, ফড়িয়া, মধ্যস্বত্বভোগী ও পুঁজিপতিরা অতিরিক্ত মুনাফা লুটছেন।
কৃষি ও শিল্পের বিষয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠীর পরামর্শে চলে সরকার। এদের বলয় থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। ওই মহল নিজেদের সুবিধামতো পরামর্শ দেয় সরকারকে। এ কারণে ধান ও চামড়া নিয়ে একটা অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। যথাক্রমে চাল ও কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ রাখলে এটা এড়ানো যেত। তেমনি কাঁচা পাট রফতানির ব্যবস্থা অবারিত রাখলে পাট নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রফতানিও করতে দেয়া হবে না, বাজারে বিক্রির ব্যবস্থাও থাকবে না; তাহলে অর্থ ব্যয় করে উৎপাদিত ফসল নিয়ে কৃষকেরা যাবেন কোথায়? এ অবস্থা কৃষককে মাঠে মারার শামিল। ভারত যদি বাংলাদেশ থেকে পাট কিনে পণ্য বানিয়ে মুনাফা করতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ নিজের পাট দিয়ে কেন মুনাফা করতে পারছে নাÑ বিষয়টা সরকারকে গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement