২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ব্যর্থতা

নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে মিয়ানমারকে

-

রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো প্রচেষ্টা সঠিক পথে এগোয়নি। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে এবং খাদ্য-বাসস্থান ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। অন্য দিকে মিয়ানমার তাদের ওপর চালিয়েছে গণহত্যা। বাস্তবায়ন করে চলেছে পরিকল্পিত জাতিগত নিধনযজ্ঞ। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে বিতাড়িত করে স্বদেশ ভূমি থেকে। এর আগে অন্যায়ভাবে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের নাগরিকত্ব। এখন রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করে বারবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখে ধুলো দিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে না নেয়ার পেছনে বাংলাদেশকে অভিযুক্ত করার অপচেষ্টা করছে। এরপরও রোহিঙ্গা প্রশ্নে চীন ও রাশিয়ার সমর্থন পাচ্ছে নেপিডো। রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার চাপে থাকার কথা।;কিন্তু সে চাপ উপেক্ষা করছে দুই পরাশক্তির মদদে। অন্য দিকে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার দায়ভার নিয়ে চাপে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রত্যাবাসন প্রশ্নে সবার আগে বিবেচ্য বিষয় রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন তাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া। মূল সমস্যা এখানে নিহিত। মিয়ানমার নিজের নাগরিকদের অধিকার অস্বীকার করে নির্মম কায়দায় গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উৎখাত করেছে। এখনো সামান্যসংখ্যক যেসব রোহিঙ্গা সেখানে রয়ে গেছে, তারা বন্দিশিবিরে বসবাস করছেন। তাদের নেই কোনো ধরনের মর্যাদা, নেই খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের অধিকার। উল্টো সবসময় তাদের তাড়া করে ফেরে জীবনহানির আশঙ্কা। এ নির্দয় অমানবিক পরিস্থিতি থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন তারা দেশটিতে আবার ফিরে যেতে পারেন শুধু নাগরিকত্ব পেলে। যতটুকু জানা যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের পুরো জনপদের মানচিত্র বদলে দেয়া হয়েছে। বসতবাড়ি পুড়িয়ে তাদের নামনিশানা মুছে দেয়া হয়েছে।
এ অবস্থায় মিয়ানমারে তাদের ফিরে যাওয়া গরম তাওয়া থেকে জ্বলন্ত চুলায় পড়া ছাড়া অন্য কিছু নয়। রোহিঙ্গারা মানুষ, তাদের মৌলিক মানবাধিকার রয়েছে। সভ্য মানুষের দুনিয়ায় তারা এ মৌলিক অধিকার চাইতেই পারেন। দুঃখজনক হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের এসব মৌলিক দাবি-দাওয়া উপেক্ষা করা হচ্ছে। চাপ দেয়া হচ্ছে অধিকার নিশ্চিত না করেই ফিরে যাওয়ার জন্য; কিন্তু এ ধরনের ফিরে যাওয়ায় কোনো সমাধান নয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তারা হয় সেখানে প্রাণ হারাবেন, না হয় থাকতে হবে বন্দিশিবিরে, তা না হলে তারা ফের ফিরে আসবেন বাংলাদেশে। তারা তাদের পাঁচটি দাবি উত্থাপন করেছেন। এসব দাবি ন্যায্য। বিশ্ববাসীকে এসব দাবি আমলে নিতে হবে। জাতিসঙ্ঘের আনান কমিশনে এসব অধিকার বাস্তবায়নের সুপারিশ রয়েছে। সভ্য বিশ্বের অংশ হিসেবে মিয়ানমারকে এসব দাবি পূরণ করতে হবে। এসব দাবি আদায়ে সবাই যখন মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করার কথা, সেটা না করে তাদের অনেকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। স্বাধীনভাবে নিজেদের বেঁচে থাকার দাবি করাকে অনেকে বাঁকা দৃষ্টিতে দেখছে। বেসরকারি সংস্থাগুলোকে হুমকি-ধমকি দেয়া হচ্ছে এজন্য যে, তারা রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবিক অধিকারের পক্ষে কথা বলছে। বাংলাদেশের কিছু সংবাদমাধ্যমও রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবিক অধিকারের পক্ষে অবস্থান নিতে পারছে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এদিকে, প্রতিবেশী চীনও এ সঙ্কটের সমাধানে মধ্যস্থতা অব্যাহত রাখার আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছে।
আমরা মনে করি, এ সমস্যার চাবি মিয়ানমারের হাতে। তাদের প্রথমে নৈতিকভাবে এ অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে যে, তারা রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদা ও পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে দেশে ফিরিয়ে নেবে। এ কাজ প্রমাণসাপেক্ষ। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ফেরত দেয়া ও নাগরিকত্ব দিতে কী কী করেছে, বাস্তবে সেটি মিয়ানমারকে করে দেখাতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বও একই, তারা জোর-চাপ প্রয়োগ করবে যে, রোহিঙ্গারা যাতে পরিপূর্ণ নাগরিক অধিকার ফিরে পায়। তাহলেই কেবল রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরে যেতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement