২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বিতরণে ভিসি!

অভিযোগের যথাযথ তদন্ত দরকার

-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হচ্ছে। পত্রিকা থেকে জানা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনকে বড় অঙ্কের অর্থ দেয়া হয়েছে স্বয়ং ভিসির মধ্যস্থতায়। তবে সংবাদমাধ্যমের কাছে ভিসি ও ছাত্রলীগ নেতৃত্ব উভয়ে এ ধরনের অর্থকড়ি লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের চর্চার অভিযোগ নতুন বলা চলে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দুর্নীতি বহুল বিস্তার লাভ করেছে। এক কথায় বলা যায় দুর্নীতির ‘প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ’ হয়েছে। সে অনুপাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যদি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের ঘটনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, জাতির জন্য এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
খবরে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপে পাঁচটি নতুন আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা। এই টাকা থেকে একটি ছাত্র সংগঠনকে ঈদুল আজহার আগে দুই কোটি টাকা দেয়ার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করেছেন ভিসি। এই টাকা দেয়ার মূল লক্ষ্য হচ্ছে উন্নয়নপ্রকল্প বাধাহীনভাবে যাতে সম্পন্ন হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিবদমান তিনটি গ্রুপকে দেয়া হয়েছে এক কোটি টাকা। প্রকাশিত খবর মতে, এই টাকার অর্ধেক পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি, ২৫ লাখ টাকা পেয়েছেন সাধারণ সম্পাদক, বাকি অংশ পেয়ে তৃতীয় একটি পক্ষ এবং এক কোটি টাকা দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে। উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে টাকা ভাগাভাগির প্রসঙ্গটি এখন ক্যাম্পাসে তুমুল আলোচনার বিষয়। এ টাকা সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীদের মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়েছে। তারা এক থেকে পাঁচ হাজার টাকার পেয়েছেন। পদাধিকারীরা পেয়েছেন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। কে কত টাকা পেয়েছেন তা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। ব্যাপারটি বর্তমানে ওপেন সিক্রেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং ছাত্রলীগের নেতারা এ ধরনের টাকা ভাগাভাগির ব্যাপার অস্বীকার করেছেন। টাকা ভাগাভাগির আলোচ্য বৈঠকে ভিসির পরিবারের দুই সদস্যও অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনার শীর্ষ পদ হলো ভিসি। আর বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে জ্ঞানচর্চার ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র। ভিসি জ্ঞানচর্চায় নেতৃত্ব দেয়ার কথা। ছাত্র শিক্ষকের মধ্যে জ্ঞানচর্চা ছাড়া প্রশাসনিক নিয়মশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যেসব গ্রুপ ওই অর্থ পেয়েছে বলে জানা যায়, তারা ক্যাম্পাসে কোনো সংস্কারমূলক কাজ করার রেকর্ড নেই। তবে গ্রুপগুলোর মধ্যে অন্তঃকলহ লেগেই রয়েছে। এমনকি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। ওই সব সংঘর্ষে অনেকে আহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশও এর মাধ্যমে ব্যাহত হচ্ছে। ভিসির একটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে ক্যাম্পাসে অন্যায় অপকর্ম দমনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ। সেজন্য তিনি দরকার হলে ছাত্রদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বৈঠক করতে পারেন। অথচ অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে, তিনি নিজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ছাত্রদের চাঁদাবাজির টাকা দিচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমর্যাদার স্বার্থে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ ভাগাভাগির প্রসঙ্গে তদন্ত হওয়া দরকার। অচিরেই তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement