১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন

দায়িত্ববোধ ও সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে

-

এ দেশে পাবলিক পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের মান কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই। সেটা আবারো প্রমাণিত হলো, চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় খাতা পুনঃমূল্যায়নের আবেদনের পর ফলাফলে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটার মধ্য দিয়ে।
এবার এইচএসসি পরীক্ষায় খাতা পুনঃমূল্যায়ন আবেদনের পর চার হাজার ৩১২ জন পরীক্ষার্থীর নম্বর গণনার ক্ষেত্রে ভুল ধরা পড়েছে এবং তাদের ফল পরিবর্তন করা হয়। এর মধ্যে ৬৪৭ জন নতুন করে জিপিএ ৫ পায়। আর ফেল করা ৬১৯ জন শিক্ষার্থী পাস করেছে। নয়া দিগন্তে প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে এসব তথ্য জানা যায়। রিপোর্টে বলা হয়, খাতা মূল্যায়নে সীমিত সময় দেয়া, ভিন্ন বিষয়ের শিক্ষককে প্রধান পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা ইত্যাদি কারণে খাতার মূল্যায়ন যথাযথভাবে করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া, খাতা দেখার পারিশ্রমিক কম হওয়ার কারণে অনেক শিক্ষক খাতা দেখায় মনোযোগ দেয়ার আগ্রহ পান না। আবার খাতা দেখা বাবদ পাওনা পুরো টাকাও তারা পাচ্ছেন না। পাওনা থেকে শতকরা ১০ ভাগ কেটে রাখার নিয়ম চালু করা হয়েছে গত বছর থেকে। এতে সব শিক্ষকের মধ্যেই অসন্তোষ আছে। খাতা মূল্যায়নে যতটুকু মনোযোগ ও নিষ্ঠা থাকা দরকার, ততটা তারা দিতে পারছেন না বা দিচ্ছেন না।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ‘ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে’, কথাটা বলা খুব সহজ। কিন্তু জিপিএ ৫ পাওয়ার উপযুক্ত একজন শিক্ষার্থী যখন নিছক খাতার মূল্যায়নে শিক্ষকের অবহেলার কারণে জিপিএ ৫ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়, তখন এমনকি তার সারাটা জীবনই লণ্ডভণ্ড হয়ে যেতে পারে। খাতা পুনঃমূল্যায়নের সুযোগ এতটাই সীমিত যে তাতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার কোনো সুযোগ নেই।
বর্তমানে খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদনে পুরো খাতা মূল্যায়নের কোনো সুযোগ নেই। শুধু নম্বর যোগ করার ক্ষেত্রে ভুল আছে কি না, খাতা থেকে নম্বর ঠিকমতো তোলা হয়েছে কি না, সব উত্তরের পাশে নম্বর দেয়া আছে কি না এবং ওএমআর শিটে ঠিকমতো বৃত্ত ভরাট হয়েছে কি নাÑ এসব দেখা হয়। আর এতে করেই প্রায় প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এটা পরীক্ষক ও খাতা নিরীক্ষার সাথে যারা জড়িত, সম্পূর্ণরূপে তাদের অবহেলা আর অমনোযোগের ফল।
যদি পুরো খাতা মূল্যায়নের ব্যবস্থা থাকত তাহলে ফলাফলে আরো ব্যাপক পরিবর্তন আসত। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষার্থীকে ন্যায্য নম্বর দেয়া হয়েছে কি না, তা জানার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অথচ এটি থাকা উচিত।
আমরা বলতে চাই, পরীক্ষার খাতার মূল্যায়ন যথার্থ ও ন্যায্য হতেই হবে। একজন শিক্ষার্থীও যেন প্রাপ্য নম্বর থেকে বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করাই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তাই যেকোনো মূল্যে এটা করতে হবে। খাতা মূল্যায়নে বড় ধরনের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক ও এর সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা দরকার। তাহলে প্রতিটি পর্যায়ে তারা সতর্ক থাকতে বাধ্য হবেন। এতে ভুলের পরিমাণ কমে আসবে। তখন খাতা পুনঃমূল্যায়নের আবেদনও কমে আসবে। খাতা দেখার সম্মানী প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে। খাতা দেখার সময়সীমা বাড়ানো এবং প্রাপ্য থেকে শতকরা ১০ ভাগ কেটে রাখার নিয়ম অবিলম্বে রহিত করা যেতে পারে। তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের প্রথা বাতিল করা দরকার। ফল প্রকাশের সময় আগের মতো অন্তত তিন মাস করা দরকার। মোটকথা, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ন্যায্য ফলাফল নিশ্চিত করা সবচেয়ে জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement