২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রেলের বিপুল জমি বেদখল

উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেই

-

ব্রিটিশ আমলে উপমহাদেশে রেল যোগাযোগের গোড়াপত্তন। তখনই সংস্থাটির জন্য অধিগ্রহণ করা হয় বিপুল পরিমাণ জমি; যাতে করে অদূর ভবিষ্যতে রেললাইন সম্প্রসারণে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিপুল ভূসম্পত্তির মালিক হয়েছে। অর্থাৎ রেলওয়ের জমির কোনো ঘাটতি নেই। রেলের জন্য জমি অধিগ্রহণে ইংরেজদের দূরদর্শী পদক্ষপের সুফল এত বছর পরে আজো আমরা ভোগ করছি। তবে দুঃখের বিষয়, স্বাধীন বাংলাদেশে রেলের জমি জবরদখলের দিক দিয়ে ব্যক্তিপর্যায় থেকে সরকারি-বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই পিছিয়ে নেই।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে সংস্থাটির মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর, যার ৩ হাজার ৮৪১ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এর মধ্যে ৯২২ একর জমি দখল করে আছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। রেলের পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) ৫২৬ একর জমি বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে। পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলের ৩৯৬ একর জমি অবৈধ দখল করে রেখেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা জমির একটা বড় অংশের মালিকানা নিয়ে আছে মামলা জটিলতা। ইজারা নিয়ে, শর্ত অনুযায়ী দীর্ঘ দিন ধরে টাকা না দেয়ায় কিছু জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। ফলে নতুন করে ইজারা দেয়া বন্ধ রয়েছে। তবে ইজারাদার জমির দখলও ছাড়ছে না। বেদখল হওয়া জমি দখলমুক্ত করতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কাজ করলেও তা আশানুরূপ নয়।
রেলওয়ের ভূসম্পত্তি শাখা সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) রেলওয়েতে সব মিলিয়ে জমি আছে ২৪ হাজার ৪৪০ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছে ১৭ হাজার ১৬৯ একর। বাকি ৭ হাজার ২৭১ একর জমি পড়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। এই জমির মধ্যে ৮৫৪ একর অবৈধ দখলে রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে সাড়ে ২৪ হাজার একর জমির মধ্যে রেলওয়ের অপারেশন কার্যক্রমে সরাসরি ব্যবহার করা হয় ১৫ হাজার একর। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইজারা দেয়া আছে ৪ হাজার ৯৭২ একর। বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ৪৮৮ একর জমি ইজারা দিয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। অবশিষ্ট জমি কৃষি, মৎস্য, নার্সারি বা বনায়ন, সিএনজি স্টেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে রেলওয়ের দখলাধীন অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৮৩ একর। অন্য দিকে, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) জমিও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের ৩৯৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। এ ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে সরকারের সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। একেক প্রতিষ্ঠান একেক কায়দায় রেলের জমি দখলে নিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করা জমি নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নানা সময় রেলওয়ের জমি ইজারা নিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে এমনিতেই নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে এখন একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান। রেল কর্তৃপক্ষ হাতছাড়া হওয়া বিপুল ভূসম্পত্তি উদ্ধার করে যদি পরিকল্পিতভাবে সব জমির সর্বোচ্চ মাত্রার ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় হতে পারে। এতে লোকসান অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে জমি উদ্ধারে জোরালো ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট। আমরা মনে করি, রেলের যেসব জমি অবৈধ দখলে রয়েছে; তা উদ্ধারে দ্রুত সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সেই পদক্ষেপ যেন লোক দেখানো না হয়, সে বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে।উদ্ধারে কার্যকর পদক্ষেপ নেই


আরো সংবাদ



premium cement