১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গভীর সমুদ্র বিরোধ

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অবস্থান দেশের স্বার্থহানিকর

-

ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আমাদের গভীর সমুদ্র নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের আপত্তি জানানো আছে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেনের এই আপত্তি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অবস্থান বাংলাদেশের স্বার্থহানি ঘটতে পারে। এমনটি জানিয়েছে একটি কূটনৈতিক সূত্র। কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিক জানিয়েছেÑ গত ২০ আগস্ট ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সাথে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর তিনি তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, কিভাবে বঙ্গোপসাগরে কনটিনেন্টাল শেলফ নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় সে বিষয়ে উভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং উভয়পক্ষ সমঝোতার মাধ্যমে এ বিরোধ নিষ্পত্তি করবে এবং জাতিসঙ্ঘে তাদের পেশ করা আপত্তি তুলে নেয়া হবে।
নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কূটনীতিকেরা অবাক হন, যখন তারা জানতে পারেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত ও মিয়ানমারের সাথে গভীর সমুদ্র নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে জাতিসঙ্ঘে দায়ের করা বাংলাদেশের আপত্তি তুলে নেয়ার অবস্থান নিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে এ ব্যাপারে একজন জ্যেষ্ঠ কূটনৈতিক বলেছেন, ‘কোনো সুনির্দিষ্ট সমাধান ছাড়া জাতিসঙ্ঘে দায়ের করা এই আপত্তি প্রত্যাহার করা বাংলাদেশের জন্য হবে ধ্বংসাত্মক এক পদক্ষেপ। এর ফলে গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশের ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার দাবি ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে এবং সমুদ্রসীমা নির্ধারণে ভারতের নির্ধারিত স্থানাঙ্ক নির্ধারণ নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের বিষয়টিও এর ফলে অমীমাংসিত থেকে যেতে পারে।’
বিরোধের সৃষ্টি ২০০৯ সালে, যখন ভারত বঙ্গোপসাগরে কনটিনেন্টাল শেলফ নিয়ে অভিযোগ দায়ের করে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রে প্রবেশের পথ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার প্রয়াস চালায়। একইভাবে বাংলাদেশের দাবি করা ৯০০ কিলোমিটার এলাকা ভারতের বলে দাবি করে। ২০০৯ সালে ভারত আরেকটি বিরোধের জন্ম দেয় বাংলাদেশের ২.৩ কিলোমিটার ভেতরে স্থানাঙ্ক নির্ধারণ করে সরকারিভাবে প্রকাশিত এক মানচিত্রে। তখন বাংলাদেশ তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদ জানায় জাতিসঙ্ঘে। এরপর দু’দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমানা নির্ধারণের দাবি জানায়। সে বিষয়টি ২০০৯ সাল থেকে অমীমাংসিত পর্যায়ে রয়েছে।
২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ‘কমিশন অন দ্য লিমিটস অব দ্য কনটিনেন্টাল ইনফরমেশন’-এর কাছে বাংলাদেশ লিখে জানায় কনটিনেন্টাল শেলফকে বেইস লাইন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইলে সীমিত করতে, যেখান থেকে টেরিটরিয়াল সি-এর প্রশস্ততা পরিমাপ করা হয়। ভারত তখন বাংলাদেশের এই দাবির প্রতি আপত্তি জানায়। জাতিসঙ্ঘের ওয়েবসাইটে এর উল্লেখ রয়েছে। ভারতের সাথে এর দাবির প্রশ্নে একটি আরবিট্রেশন প্রসিডিং সমাপ্ত হয় ২০১৪ সালে একটি রায়ের মাধ্যমে, যাতে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়। এই রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বেইস লাইন, টেরিটরিয়াল সি ও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ঘোষণা করে এর গেজেট প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশের টেরিটরিয়াল সি-এর সীমা হবে বেইস লাইন থেকে সমুদ্র অভিমুখে হবে ১২ নটিক্যাল মাইল। এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের বহিঃসীমা এমনভাবে নির্ধারিত হবে যে, উল্লিখিত আউটার লিমিটের প্রতিটি পয়েন্ট হবে সবচেয়ে কাছের বেইস লাইন থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল।
বাংলাদেশ ২০১৬ সালের ৩০ মার্চ পেশ করে ভৌগোলিক স্থানান্তর পয়েন্টের সংশ্লিষ্ট করে সরল রৈখিক বেইস লাইনের একটি তালিকা, যার ওপর ভিত্তি করে টেরিটরিয়াল সি-এর প্রশস্ততা মাপা হবে। পয়েন্টের স্থানাঙ্কগুলো হচ্ছে ল্যান্ড বাউন্ডারি টার্মিনাল (ভারত), পুটনি হাটা, দক্ষিণ ভাসানচর, কক্সবাজার এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণপ্রান্ত। বাংলাদেশ সরকারের ডকুমেন্ট প্রকাশের দুই বছর পর ভারত ২০১৭ সালে জাতিসঙ্ঘে এর আপত্তি জানায়। ভারত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের দাবিও তোলে। মিয়ানমারও ২০০০ সালে জাতিসঙ্ঘে যে আপত্তি জানায় বাংলাদেশের দাবির প্রতি, বাংলাদেশও মিয়ানমারের দাবির প্রতি আপত্তি জানায়।
জাতিসঙ্ঘে দায়ের করা ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আপত্তিগুলো অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। এখন এসব নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ঢাকা যদি তাদের আপত্তি তুলে নেয়, তবে তা বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে যেতে পারে বলে কূটনীতিকেরা যে আশঙ্কা করছেন, সে বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল