১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্কুল মিল কার্যক্রম

খাবারের মান যেন নিশ্চিত হয়

-

স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী টানতে বিদেশী সহযোগিতায় গুঁড়ো দুধ ও বিস্কুট বিতরণ করা হতো। পরবর্তীকালে এনজিও পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের স্কুলমুখী করতে খাবার দেয়ার কর্মসূচি চালু করা হয়। কিন্তু ওই সব স্কুলে পরিবেশিত খাবারের মান নিয়ে অনেক সময় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কখনো বা দেখা গেছে, এ খাবার খেয়ে কিছু শিশু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফলে এ কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়েছে। এটির আরেকটি লক্ষ্য ছিলÑ দরিদ্র শিশুদের কিছুটা হলেও অপুষ্টিজনিত ঘাটতি পূরণ করা। কিন্তু কিছু লোকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ কর্মসূচি তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। এ নিয়ে কিছু এনজিওর আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার প্রবণতাও লক্ষ করা গেছে। অনেক সময় বরাদ্দকৃত পয়সা বাঁচিয়ে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করার অভিযোগ উঠেছে।
দেশে শিক্ষার হার বাড়াতে কয়েক দশক আগে সরকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকপর্যায়ে উপবৃত্তি চালু করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছেÑ সংশ্লিষ্ট অনেকের অসততার কারণে ওই কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সততা অতীতে ছিল প্রবাদপ্রতিম, অথচ তাদের অনেকেই উপবৃত্তির টাকা ‘নয়-ছয়’ করেছেন সাম্প্রতিককালে।
এবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুপুরের খাবার অন্তর্ভুক্ত করে গত সোমবার ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ২০২৩ সালের মধ্যে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে সরকারের খরচ হবে সাত হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। শুরুতে চর, হাওর ও দুর্গম এলাকার বিদ্যালয়গুলোতে এ সুবিধা দেয়া হবে। পরীক্ষামূলকভাবে তিন উপজেলার স্কুলে রান্না করা খাবার এবং ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট বিতরণ করা হচ্ছে। এই ১০৪টি উপজেলার মধ্যে ৯৩টিতে সরকার ও ১১টিতে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি অর্থায়ন করছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে বলে জানা গেছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ কর্মসূচি চালু করা হবে। এগুলো কিভাবে সমন্বিতভাবে সারা দেশে ছড়ানো যায়, এ জন্য এ নীতিমালা।
সরকারি ভাষ্য মতে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্কুল মিল প্রকল্প পরিচালিত হবে। এটি বাস্তবায়নে ‘জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেল বা ইউনিট কাজ করবে। এ কর্মসূচির কার্যক্রমের ধরন ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে গাইডলাইন সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তি চাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে; যা প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৩-১২ বছরের ছেলে ও মেয়েশিশুদের জন্য প্রযোজ্য হবে। অর্ধদিবস স্কুলের ক্ষেত্রে দৈনিক অণুপুষ্টিকণার চাহিদা ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা। এ ছাড়া জাতীয় খাদ্যগ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তির ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং ১৫-৩০ শতাংশ চর্বি থেকে আসা নিশ্চিত করা হবে।
সরকারের এ উদ্যোগটি প্রশংসার দাবি রাখে; একই সাথে গণমুখীও বটে। তবে এটি যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মধ্যেই রয়েছে সার্থকতা। তাহলেই এর উপকারভোগী হবে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। আমরা মনে করি, শিক্ষা বিস্তারে আগে যেসব কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর ত্রুটিবিচ্যুতি শনাক্ত করা জরুরি। সে আলোকে বর্তমান প্রকল্পের কর্মপদ্ধতি প্রণয়ন করাই হবে বাস্তবসম্মত। এ জন্য সর্বপ্রথমে দরকার, পরীক্ষামূলকভাবে যেসব স্কুলে এ কর্মসূচি চালু আছে, সেখানে পরিবেশিত খাবারের মান নিশ্চিত করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement