১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চামড়া শিল্পে দুরবস্থা

সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে

-

কোরবানির পশুর চামড়া বেচাকেনা নিয়ে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। গতকাল সোমবার থেকেই আড়তদারদের চামড়া বিক্রি করার কথা। ট্যানারি মালিকদের কাছে তাদের যে পাওনা রয়েছে তা আদায়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ২২ আগস্ট। শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন এবং চামড়া খাতসংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো বসে এ সমস্যার সমাধান করবে।
গত রোববার সচিবালয়ে চামড়া ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের সাথে প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ বিষয়ে সমঝোতা হয়। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিবরা ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এই সমঝোতা একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও নেতা-সমর্থকেরা যে ভাষায় চামড়া শিল্পের বিপর্যয়ের আশঙ্কার দিকটি ব্যাখ্যা করছেন তা রীতিমতো উদ্বেগের।
শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, এক কোটি চামড়ার মধ্যে এ বছর ১০ হাজার পিস নষ্ট হয়েছে। তবে বিপুল পরিমাণ চামড়া পানিতে ফেলে দেয়ার যে তথ্য গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে, সেটা সঠিক নয়। বরং এটা যদি হয়েই থাকে, তাহলে সেটা বিএনপি করেছে। তারা রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে সফল হতে না পেরে বিনিয়োগ করে এটা করেছে।
এই একটি প্রবণতা অর্থাৎ নিজেদের ব্যর্থতার সব দায় বিএনপি-জামায়াত তথা বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর প্রয়াস থেকে শিল্পমন্ত্রীও বেরোতে পারলেন না। এর আগেও প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে মন্ত্রীরা একই ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। সবচেয়ে স্মরণীয় অযৌক্তিক উক্তিটি করেছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সাভারে রানাপ্লাজা ধসে পড়ে প্রায় ১২০০ গার্মেন্ট শ্রমিক মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারানোর ঘটনায়ও তার মন্তব্য ছিল, বিএনপির লোকেরা রানা প্লাজার পিলার ধরে নাড়াচাড়া করেছিল। আর সেজন্যই বহুতলবিশিষ্ট ওই ভবনটি ধসে পড়ে। কৃষক ধানের দাম না পেয়ে যখন প্রচণ্ড ক্ষোভে পাকা ধানের ক্ষেতে একের পর এক আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছিলেন, তখনো একই ধরনের মন্তব্য আমরা শুনেছি।
এখন চামড়া নিয়ে যে বিপর্যয় সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, তার পেছনে সরকারি দলের সাথে সংশ্লিষ্ট ট্যানারি মালিকদের যোগসাজশ বা সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল বলে পত্র-পত্রিকার রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে। আর এসব রিপোর্ট কোনো রকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়া করা হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক, মন্ত্রণালয়ের তথ্যের ভিত্তিতেই এগুলো প্রকাশ করা হয়। রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘চামড়া ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নেমে আসার পেছনে একটি মহল সব সময় সিন্ডিকেট করে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যাহত করার চেষ্টা করে। সিন্ডিকেটের একটা চক্র আমাদের দেশে রয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘চামড়ার দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে যারা দোষী তাদের কাউকে রেহাই দেয়া হবে না। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
রোববারের বৈঠকেও একজন আড়তদার সবার সামনেই বলেন, ‘চামড়া নিয়ে ট্যানারি মালিকেরা সিন্ডিকেট করেন। তারা আড়তদারদের বিপদে ফেলেন। তারা কোরবানির পর দুই-আড়াই মাস কোনো চামড়া কেনেন না।’ আড়তদার সমিতির নেতারা বৈঠকে তথ্য তুলে ধরে বলেন, এবারের ঈদে অন্তত ৩৫ লাখ পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে।
এই বাস্তবতা বহাল রেখে শিল্পমন্ত্রী যতই বলুন অতিরিক্ত গরমে এবং বিএনপির কারসাজিতে মাত্র ১০ হাজার পিস চামড়া নষ্ট হয়েছে, তাতে কিন্তু সমস্যার মোটেও সমাধান হবে না। চামড়ার অভাবে ট্যানারিগুলো যখন সারা বছর নিষ্ক্রিয় থাকবে এবং শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়বেন, তখন কোনো খোঁড়া যুক্তিতেই এই গুরুত্বপূর্ণ খাতটির ধ্বংস ঠেকানোর উপায় থাকবে না।
তাই সরকারের উচিত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে চামড়া শিল্পের সাথে সক্রিয় ‘সিন্ডিকেট’ ভেঙে দেয়া এবং এ শিল্পের সুষ্ঠু পরিবেশ অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা। এই বাস্তবতা সামনে রেখেই কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত তুলে নেয়া দরকার বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement