২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানবিহীন উন্নয়ন

এটা টেকসই হতে পারে না

-

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, উচ্চহারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে। দ্রুত দেশ উন্নতির শিখরে চড়ছে। অচিরেই বাংলাদেশ বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। নানা তথ্য-উপাত্ত যখন বড় বড় আশাজাগানিয়া খবর দিচ্ছে; তখন আরো জানা যায়, বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে এ দেশে। তা ছাড়া, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে দেশে বিনিয়োগ নেই। এ অবস্থায় বাংলাদেশের উন্নয়ন নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিরাট সংশয়। এই উন্নয়ন কি আসলে টেকসই? না যেকোনো সময় এটি ধসে পড়তে পারে! চার দিকে শুধু বড় বড় প্রকল্প। কিন্তু এসব প্রকল্প দেশের প্রকৃত ও স্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, ওয়ার্ল্ড এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল আউটলুক-২০১৮ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে বাংলাদেশের বেকার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮ লাখে, ২০১২ সালে তা ছিল ২৪ লাখ। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে বেকার জনগোষ্ঠীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৩০ লাখে। তরুণ ও যুবকদের সঠিকভাবে হিসাবের আওতায় আনা হলে বেকারের সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে। এ দেশের বড় একটা জনগোষ্ঠী প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। পরিবারের এক সদস্য দেশের বাইরে উপার্জন করে অর্থ পাঠায়, বাকিরা তার ওপর নির্ভরশীল। তারা কোনো কাজ না করেই জীবন কাটাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন হিসাবে বেকারের সংখ্যা আরো কম করে দেখানো হয়েছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের শ্রমশক্তি জরিপে বলা হয়, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। তাদের হিসাবে, আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ।
জানা যায়, প্রতি বছর ২০ লাখের বেশি তরুণ শ্রমবাজারে যুক্ত হচ্ছেন। কিন্তু তাদের অর্ধেকের বেশি কাজ পান না। তদুপরি যারা পান, তাদের মধ্যে সবাই পূর্ণমাত্রায় কাজ পান না। তাদের মধ্যে একটা অংশ সপ্তাহ বা দিনের কিছু অংশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তারা কাক্সিক্ষত পারিশ্রমিকও পান না। এর সাথে রয়েছে, যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া। আগে থেকেই বাংলাদেশের শ্রমবাজারে শূন্যতা ছিল। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল পান না উদ্যোক্তারা। ফলে তারা অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে, দেশে ব্যাপক বেকারত্ব বিরাজ করার পরও কেন বাইরে থেকে লোকবল নিয়োগ দেয়া হচ্ছে? আসলে বাংলাদেশের যে শিক্ষাব্যবস্থা, সেটি উপযুক্ত জনবলের জোগান দিতে পারছে না; যদিও বেকারত্বের মধ্যে উচ্চশিক্ষিতরাই সংখ্যায় বেশি। অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থা এমন জনবল সৃষ্টি করছে, যারা কর্মক্ষেত্রে যোগ্য নন। এ ধরনের জনবল দিয়ে বাংলাদেশে কিভাবে টেকসই উন্নয়ন হবে?
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও বেকারত্বের হার কমবে না, এটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার। চোখ ধাঁধানো কসমেটিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান দেখানো হচ্ছে মূলত সেবা খাতের ব্যাপক বিস্তার এবং বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পে বিপুল অর্থ ব্যয় থেকে। এর সাথে পোশাক খাতের আয়ও রয়েছে। কিন্তু টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রয়োজন ব্যাপক বিনিয়োগ, যেখানে হবে বিপুল কর্মসংস্থান। এর সাথে করতে হবে কৃষি ও শিল্প খাতের প্রসার। এগুলো বাংলাদেশে অনেকটা মুখ থুবড়ে আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে অতিরঞ্জিত প্রচার চালানো সঙ্গত হতে পারে না। প্রয়োজন শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মমুখী করা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্থায়ী উদ্যোগ নেয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement