২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঈদে অসংখ্য মানুষের ঝুঁকি বাড়বে

সড়ক ও রেলপথ নিরাপদ করুন

-

এবার দেশে বন্যা-বৃষ্টিপাতে অন্তত ২২টি জেলায় ৭০১ কিলোমিটার হাইওয়ে এবং আঞ্চলিক ও জেলা সড়ক ক্ষতির শিকার। তদুপরি, রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৫০ কিলোমিটার। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা ‘স্বাভাবিক’ দেখাতে এসব সড়ক ও রেলপথ জোড়াতালি দিয়ে কোনো মতে দ্রুত ও দৃশ্যত মেরামত করার কাজ চলছে। তবে বর্ষার বর্ষণে মাঝে মধ্যে এ কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ঈদের বাকি আছে মাত্র চার-পাঁচ দিন। এত অল্প সময়ে পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ ও সড়কের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। দুর্ভোগ ও কষ্টের ঝুঁকি নিয়েই আজ থেকে অসংখ্য মানুষের পুরোদমে ঈদযাত্রার সূচনা হতে যাচ্ছে। সরকার ডেঙ্গুর কারণে রাজধানীর লোকজনকে ঈদে বাড়ি যেতে নিরুৎসাহিত করেছে। তবে এতে খুব বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। ঈদে বাড়ি যেতে বাস-ট্রেনের টিকিট কেনার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের ভিড় তারই সাক্ষ্য দেয়। এ অবস্থায় ঈদযাত্রীদের বাড়ি গমন এবং সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন, দুটোই নির্বিঘœ করার জন্য সড়কপথ ও রেললাইনের যথাযথ সংস্কার ও সংরক্ষণ জরুরি।
পত্রপত্রিকার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়েছে, ভাঙাচোরা রাস্তা এবং দুর্বল হয়ে পড়া রেলপথে বাস, মিনিবাস, কার প্রভৃতি সড়কযান এবং ট্রেনকে ঝুঁকি নিয়ে সীমিত গতিতে চলাচল করতে হবে। কারণ, জোরে চললে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বে। বিশেষত বর্ষা মওসুমে মাটি নরম থাকে বলে, অনেক ক্ষেত্রেই স্বাভাবিক গতি বজায় রাখাও যানবাহনের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। এর দরুন ট্রেন-বাসের শিডিউল ভেঙে পড়তে পারে। তখন ঈদে বাড়ি পৌঁছতে এবং কর্মস্থলে ফিরতে শুধু অতিরিক্ত সময়ই লাগবে না, অনেক বেশি দুর্ভোগও পোহাতে হবে। আর বৃষ্টি যদি হয়, তখন তো ভোগান্তি সীমা ছাড়িয়ে যাবে। সাম্প্রতিক বন্যার পর এবার ঈদে যাত্রীদের চাপ মোকাবেলা করতে বন্যাদুর্গত এলাকা, নড়বড়ে রেললাইন, মেয়াদোত্তীর্ণ সেতু-কালভার্ট প্রভৃতি দিয়ে সর্বনিম্ন গতিতে ট্রেন চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আসলে এবার বর্ষা মওসুম ও বন্যা শুরু হওয়ার আগেই চার হাজার ২৪৫ কিলোমিটার সড়ক ও মহাসড়কের অবস্থা ছিল খারাপ। এর সাথে যোগ হলো বন্যাকবলিত ৭০১ কিলোমিটার রাস্তা। ঈদ ঘনিয়ে আসায় এই সড়কগুলো ‘আপৎকালীন’ সংস্কারের নামে যা করা হচ্ছে, তাতে যাত্রীদের বিপদ না কাটার আশঙ্কাই অধিক। তা ছাড়া, বিশেষ করে মহাপ্রকল্পের আওতাধীন মহাসড়কের নির্মাণ ও সংস্কারকাজ আগে থেকেই চলমান রয়েছে। যেমনÑ ভাঙ্গা (ফরিদপুর) থেকে রাজধানী ঢাকা, জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইল, ঢাকার উত্তরা থেকে গাজীপুরসহ বিভিন্ন সড়কে উন্নয়নকাজ চলছে। এতে কোথাও বা ঘন ঘন যানজটে পড়তে হয়; আর কোথাও গাড়ি চালাতে হয় ধীরে ধীরে। এ ছাড়া আরিচা ও মাওয়া মহাসড়কের যাত্রীদের ফেরিতে পারাপারের ক্ষেত্রে অচলাবস্থার কথা তো বলাই বাহুল্য। অপর দিকে, ‘সর্বাপেক্ষা নিরাপদ যান’ হিসেবে দীর্ঘকাল ধরে গণ্য হওয়া ট্রেনের চলাচলও নানা কারণে বিঘিœত হচ্ছে। রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ বটেই, তদুপরি ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ইঞ্জিন ও বগি দিয়ে ট্রেন চালু রাখতে হচ্ছে। ঈদের সময় সড়কপথের মতো রেলপথেও যাত্রীর ভিড় বেড়ে যাবে কয়েক গুণ। তখন দুর্ভোগও বৃদ্ধি পাবে অনেক।
আমরা আশা করি, যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও নির্বিঘœ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে সড়ক ও রেলপথের টেকসই সংস্কারের জন্য সরকার সম্ভাব্য সব কিছুই করবে। এ জন্য যথাসময়ে কাজ সম্পন্ন করার স্বার্থে পর্যাপ্ত অর্থ, জনবল ও সরঞ্জামের ব্যবস্থা থাকা চাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement