১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

জাতীয় স্বার্থ যেন প্রাধান্য পায়

-

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমবাজার খোলা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। অথচ এ দেশেই সৌদি আরবের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক সেখানে কাজ করছেন। এই বাজার স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে তা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটা বড় আঘাত।
এক বছর ধরে মালয়েশিয়ায় আমাদের শ্রমশক্তি রফতানি বন্ধ রয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া সরকার দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আমদানির ওপর স্থগিতাদেশ দেয়। এর আগে, ঢাকার ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির নামে দেশটিতে প্রায় পৌনে তিন লাখ কর্মী গেছে বলে গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়। তাদের পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, তার সাথে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর যোগসাজশ ছিল, এমন অভিযোগ ওঠে সে দেশের গণমাধ্যমে। এরপরই মালয়েশিয়া সরকার সেই দুর্নীতির রহস্য উদঘাটনে অনুসন্ধান শুরু করে। ‘আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার’ মাহাথির মোহাম্মদ গত বছর নতুন করে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর ঘোষণা দেন, কোনো ধরনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তার দেশে বিদেশী কর্মী আমদানি করা হবে না। শুধু তা-ই নয়, অবশ্যই অল্প অভিবাসন ব্যয়ে (কম খরচে) কর্মী আসতে হবে বলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি তিনি অনুরোধ জানান।
এক বছর ধরে বাংলাদেশ এ বিষয়ে মালয়েশিয়ার সাথে দফায় দফায় দেনদরবার করে আসছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী নেতারা বহুবার বলেছেন, যেকোনো মুহূর্তে বাজারটি উন্মুক্ত হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
সর্বশেষ গত ২৯-৩০ জুন মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে এবার কর্মী পাঠানো হবে, বেতনভাতা কী হবে, শ্রম আইন অনুযায়ী থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিভাবে নিশ্চিত করা হবে; সেসব বিষয় নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে বলে পত্রিকার খবরে জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ মুহূর্তে এমওইউ (মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং) চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। এটি শেষ হলে প্রস্তাবটি পাঠানো হবে মালয়েশিয়ার কেবিনেটে। এতে অনুমোদন হলেই আসতে পারে স্থগিত শ্রমবাজার খুলে দেয়ার কাক্সিক্ষত ঘোষণা।
কিন্তু নয়া দিগন্তের এক রিপোর্টের সূত্রে জানা যায়, এরই মধ্যে কথা উঠছে, আগে যাদের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট করে লোক পাঠানোর অভিযোগ ছিল, সেই একই সিন্ডিকেটের মধ্য থেকে একাধিক এজেন্সি মালিক আবারো মালয়েশিয়ার চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের নিয়ে নানা কৌশলে ‘মেডিক্যাল সিন্ডিকেট’ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ইতোমধ্যে ঢাকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও দুবাইতে এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের একাধিক বৈঠক হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা বিষয়টি জানার পর তাদের গতিবিধি শনাক্ত করতে মাঠে মেনেছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। এর বাইরেও, মালয়েশিয়ার দু’টি সিন্ডিকেট এ বিষয়ে সক্রিয় বলে খবরে জানানো হয়। এ ছাড়া ওই দেশের দু’টি সফটওয়্যার কোম্পানি এবার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণে তাদের অনলাইন সিস্টেম দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সূত্রটি জানিয়েছে, মাহাথির মোহাম্মদের ‘নো সিন্ডিকেট’ ঘোষণার পর ঢাকা ও মালয়েশিয়ার সক্রিয় সিন্ডিকেটের সদস্যরা শ্রমিক পাঠানোর জন্য কলিং ভিসার সিন্ডিকেট বাদ দিয়ে প্রভাবশালীদের সমন্বয়ে ১৫-১৬টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে নতুন ‘মেডিক্যাল সিন্ডিকেট’ গঠন করতে ভেতরে ভেতরে জোর লবিং করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এবার কোনো সিন্ডিকেটের হাত থাকবে না, এটাই চূড়ান্ত। তারা বলেছেন, শ্রমবাজার উন্মুুক্ত করতে মালয়েশিয়ার কোনো সমস্যা নেই। যত সমস্যা এখন বাংলাদেশে। এখানেই বেশি কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। এ কারণেই এই মার্কেট খুলতে বিলম্ব হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
আমরা আশা করব, বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সব রকম সিন্ডিকেট গড়া থেকে বিরত থাকবেন এবং শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement