২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বনভূমি বেদখল হচ্ছে

জোরালো নজরদারি দরকার

-

পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে পরিবেশের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরাসহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় বেড়ে গেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে পৃথিবীর উপকূলীয় অঞ্চলের জনবসতি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বনভূমি উজাড়, গাছপালা ধ্বংসের মাধ্যমে উষ্ণতা বৃদ্ধি আরো ত্বরান্বিত হচ্ছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় পর্যাপ্ত বনভূমি নেই। এ অবস্থায় খবর পাওয়া যাচ্ছে, দেশের বিপুল বনভূমি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। বনভূমি দখল হয়ে গড়ে উঠছে কলকারখানা ও জনবসতি। উল্টো বনভূমি হয়ে উঠছে পরিবেশ দূষণের উপলক্ষ। যতটা দরদ দিয়ে দেশের বনভূমি রক্ষা করার কার্যক্রম পরিচালনা করা দরকার ছিল তা দেখা যাচ্ছে না।
বন বিভাগের এক প্রতিবেদন থেকে বনভূমি বেদখলের খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তাদের দেয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, মাত্র দুই বছর চার মাসে ১১ হাজার একর বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত দেশে বেদখল হওয়া মোট বনভূমির পরিমাণ দুই লাখ ৮০ হাজার একর। বেসরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বনের জায়গা দখলের পরিমাণ আরো অনেক বেশি। সহযোগী একটি পত্রিকা জানাচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০০১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তিন লাখ ৭৮ একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। এটি বাংলাদেশের মোট বনভূমির প্রায় ৮ শতাংশ। তাদের হিসাবে, কেবল ২০১৭ সালেই ৭০ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। গত পাঁচ বছরে উজাড় হয়েছে দুই লাখ ৩১ হাজার ৪৩ একর বনভূমি। সরকারি হিসাবে দেশের মোট বনভূমির পরিমাণ ৬৩ লাখ ৬৮ হাজার ৮৫৯ দশমিক ১৭ একর। এ হিসাব ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের। ওই সময় পর্যন্ত বেদখলে থাকা বনভূমির পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬৮ হাজার ২৬৫ একর। বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেয়া বনভূমির পরিমাণ ছিল এক লাখ ৫৮ হাজার ৩১ দশমিক ৬১ একর। বেসরকারি সংস্থার হিসাব যদি খতিয়ে দেখা হয়, তাহলে বেদখলের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে। আর গণহারে সারা দেশে যেভাবে বনভূমি উজাড় হচ্ছে, সেটা হিসাব করলে মোট বনভূমির পরিমাণ এখন আরো অনেক কমে যাওয়ার কথা, যেটা সরকারি হিসাবে আসেনি।
একটি দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্যের জন্য ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। সেখানে সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ১২ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। এর মধ্যে দেখা যাচ্ছে সরকার বিভিন্ন সংস্থাকে বনভূমি বরাদ্দ দিচ্ছে। সশস্ত্রবাহিনী, র্যাব ও বিজিবিকে বনভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৯৩ হাজার ৯২৩ একর। প্রকৃতপক্ষে দেশের প্রয়োজনে হলে এমন বরাদ্দ অসঙ্গত নয়। কিন্তু গণহারে বনভূমি বরাদ্দ দেয়া কাম্য হতে পারে না। বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনকে দেয়া হয়েছে ৪৩ হাজার ৯৫ একর। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে রয়েছে ২৩ হাজার ১৩ একর জমি। বন বিভাগের এ প্রতিবেদনে প্রকৃত বরাদ্দের চিত্র উঠে এসেছে কি না, সেটা নিশ্চিত নয়। তবে সরেজমিন দেখা গেছে, বনভূমি দখলের উৎসব সারা দেশে। প্রভাবশালী বিভিন্ন গোষ্ঠী এ কাজ করছে। বিশেষ করে কিছু জমি বরাদ্দ নিয়ে তারা দখল করছে তার কয়েক গুণ বেশি। এ প্রবণতা বন্ধে দরকার সরকারি নজরদারি, সেটি পর্যাপ্ত নয়। পরিসংখ্যান বলছে, প্রয়োজনীয় পরিমাণ বন আমাদের নেই। এ অবস্থায় দরকার বনভূমি বাড়ানো। আশা করা যায়, সরকার বনভূমি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement