২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ড্রেজিং না করেই কোটি কোটি টাকা লুটপাট

তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে

-

‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল।’ এটি আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত প্রবাদ। সরকারের সম্পদ নানাভাবে অপচয় কিংবা লুটপাটের নানা ঘটনাসূত্রে প্রবাদটির উৎপত্তি। এ প্রবাদ হয় আজকের দিনেও সমধিক কার্যকর। কারণ, সময়ের সাথে আমাদের দেশের সরকারি সম্পদের অপচয় কিংবা লুটপাটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগে কোটি কোটি টাকা লুটপাটের উদ্বেগজনক খবর অহরহ ছাপা হচ্ছে জাতীয় দৈনিকগুলোতে; কিন্তু শোনা যায় না এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার খবর। ফলে লুটপাট, অনিয়ম ও দুর্নীতি দেশে সর্বব্যাপী রূপ ধারণ করেছে।
নয়া দিগন্তের একটি প্রতিবেদনে নৌপথে ড্রেজিং সম্পর্কিত কোটি কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগের কথা জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটির মতে, নৌপথে ড্রেজিং খাতে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। কাগজ-কলমে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটের ড্রেজিং করা হয়েছে দেখানো হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। অভিযোগ, ড্রেজিং না করেই কোটি কোটি ঢাকা লুটপাট করা হচ্ছে।
জানা গেছে, লাহারহাট-ভেদুরিয়া নৌপথের তেঁতুলিয়া ও কালাবদর নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে ৯২ হাজার ঘনমিটার ও বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৫ হাজার ঘনমিটার, ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌরুট ও ঘাট এলাকায় মেঘনা নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে তিন লাখ ৪০ হাজার ও বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৬ হাজার ঘনমিটার, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের শেওরানালা, মিয়ারচর এলাকার মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ ও কীর্তনখোলা নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৯৩ হাজার ঘনমিটার, বরিশাল-নাজিরপুর-লালমোহন রুটে তেঁতুলিয়া ও লালমোহন নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে এক লাখ ৩৫ হাজার ঘনমিটার, ঢাকা-পটুয়াখালী-গলাচিপা-খেপুপাড়া নৌরুটে লোহালিয়া নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে এক লাখ ৫২ হাজার ঘনমিটার, মিরকাদিম বন্দর থেকে তালতলা এলাকায় ইছামতি নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে ৯৬ হাজার ঘনমিটার এবং বরিশাল-পাতারহাট রুটে মেঘনা নদীতে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার দিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে বলে সংস্থাটির জানিয়েছে।
কিন্তু এ তথ্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন বরিশালের লঞ্চমালিক স্বপন খান। তিনি বলেন, ড্রেজিং যদি করা হয়ে থাকে, তাহলে পটুয়াখালী থেকে গলাচিপা যেতে জোয়ারভাটার ওপর নির্ভর করতে হয় কেন? এ ছাড়া মিয়ারচরে যে পরিমাণ ড্রেজিং দেখানো হয়েছে, সেটি যদি হয়েই থাকে, তাহলে দু’টি লঞ্চ পাশাপাশি চলতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটবে কেন? তিনি আরো জানান, গত ১৬ জুলাই রাত দেড়টায় মিয়ারচর চ্যানেলে একটি জাহাজকে সাইড দিতে গিয়ে পারাবত-১১ সুন্দরবন-১০ লঞ্চের বাম পাশে আঘাত করে। এতে লঞ্চটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হন এবং যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, সংস্থাটির ড্রেজিং বিভাগ থেকে ২০১৮-১৯ সালে যে পরিমাণ ড্রেজিং করা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে, তা পুরোপুরি অসত্য। পানি একটু কমলেই তা প্রতি বছরের মতো আবারো সবার সামনে উন্মোচন হবে।
একই অবস্থা উত্তরাঞ্চলের ভৈরব-চামড়াঘাট-মিঠামইন নৌপথেও। ভৈরব-লিপসা-ছাতক-সিলেট নৌরুটে, গাগলজুর-মোহনগঞ্জ নৌরুটে, দিলালপুর-চামড়াঘাট-নিকলি-নেত্রকোনা নৌপথের বৌলাই, সুরমা ও মগড়া নদীতে যে ড্রেজিংয়ের কথা বলা হয়েছে, বাস্তব চিত্র তা থেকে ভিন্ন।
আমরা মনে করি, অবিলম্বে এসব অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত করা জরুরি। কারণ, নৌরুটগুলো আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির স্বার্থে সচল রাখা প্রয়োজন। বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement