২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বন্যা-উত্তর পুনর্বাসন কর্মসূচি

বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে হতদরিদ্রদের

-

প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বাংলাদেশ। বিশেষ করে বন্যা আর বাংলাদেশ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতি বছর দেশের প্রায় ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল, অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখণ্ড বর্ষায় তলিয়ে যায়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে দেশের ৫৫ শতাংশের বেশি ভূখণ্ড প্লাবিত হয়। এবার জুলাইয়ের শুরুতে দেশের ২৮টি জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। একনাগাড়ে ২৬ দিন পর অবশেষে গত শুক্রবার দেশের সব নদ-নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমেছে। পানি কমলেও দুর্দশা কমেনি বানভাসিদের। ডুবে থাকা বিধ্বস্ত ঘরবাড়িতে ফিরতে পারছেন না অনেকেই। বিশেষত আঞ্চলিক সড়ক ও কাঁচা রাস্তা নষ্ট হওয়ায় যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফসলের মাঠ ও বীজতলা নিমজ্জিত থাকায় মহাসঙ্কটে রয়েছেন কৃষকরা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এবারের বন্যায় ২৮ জেলার ১৬৩ উপজেলা, ৪৯ পৌরসভা ও ৯৬১ ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাজনিত কারণে মারা গেছেন ৬০ জন। পাঁচ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৮টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৩ একর জমির ফসল। ৪৫টি গবাদি পশু এবং ২২ হাজার ৩৩৯টি হাঁস-মুরগি প্রাণ হারিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার হাজার ৯৩৯টি শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সাত হাজার ২৭ কিলোমিটার সড়ক, ২৯৭টি ব্রিজ বা কালভার্ট, ৪৫৯ কিলোমিটার বাঁধ এবং ৬০ হাজার ২৮৯টি টিউবওয়েল।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে করা ‘২০১৯-এর মওসুমি বন্যা : যৌথ চাহিদার সম্ভাব্যতা’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পানি নামলেও দেশের ছয় হাজার ৮৬৭টি গ্রামে বন্যার ক্ষত রয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে ৭৬ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের মধ্যে সাড়ে তিন লাখ হতদরিদ্র। তারাই সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন। আমরা মনে করি, তাদের পুনর্বাসনে আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে অবিলম্বে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
বন্যার সময় বানভাসি মানুষের দেখা দেয় নানাবিধ দুর্ভোগ। তখন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কটে পড়েন তারা। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও বিপদে পড়তে হয়। বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দেয় পশুখাদ্যের অভাব। বানের পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় থাকার সঙ্কটও প্রকট হয়ে ওঠে। এসব সামাল দিতেই হয়রান আর পেরেশান থাকতে হয় বানভাসি মানুষকে। অন্য দিকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর তারা পড়ে যান ভিন্ন রকম সঙ্কটে। বন্যা-উত্তর সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হয়ে থাকে। ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা নিয়ে হিমশিম খেতে হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। এ সময় আসে তাদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে নিতে হয় জোরালো ও কার্যকর কর্মসূচি। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থনৈতিকভাবে হয়ে পড়েন বিপর্যস্ত। আমরা মনে করি, মাঠপর্যায় থেকে এখনই ক্ষয়ক্ষতির বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিতে হবে সরকারকে; যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেন। এই পুনর্বাসনে এনজিওগুলোরও এগিয়ে আসতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব, ভেঙে যাওয়া সড়ক, বাঁধ, ব্রিজ ইত্যাদি নির্মাণে উদ্যোগ নেয়া উচিত।
আর একটি বিষয়, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জরুরি ভিত্তিতে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সরকারকে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে। অতীতের বন্যা-উত্তর পরিস্থিতিতে সরকারের উন্নয়ন ও সংস্কার কর্মসূচিগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়, অগ্রাধিকার নির্ধারণেই ঘাটতি থাকে। প্রথমেই দরকার, ক্ষতিগ্রস্ত যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নতুন করে নির্মাণ করতে হবে, সেগুলো আগে চিহ্নিত করা। একই সাথে অবকাঠামোগত সংস্কার কাজের পাশাপাশি যেখানেই সম্ভব বিকল্প পদ্ধতিতে ক্লাস চালু করা এবং অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া প্রয়োজন। নদীতে বিলীন হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের দ্রুত শ্রেণিকক্ষে ফেরাতে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement