১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গরুকে অ্যান্টিবায়োটিকস দেয়ায় বিধিনিষেধ

ঈদের প্রাক্কালে কঠোর পদক্ষেপ চাই

-

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে গরুকে অ্যান্টিবায়োটিকস ওষুধ সেবন করানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। এবার গরুর দুধে অ্যান্টিবায়োটিকস ও সিসা পাওয়া যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত এই রায় দিয়েছেন। সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ, এই প্রেক্ষাপটে পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অনেক মালিকই গরু মোটা করার জন্য ডেক্সামিথাসোন, বেটামিথাসোন পেরিয়াক্টিনসহ বিভিন্ন প্রকার স্টেরয়েড ব্যবহার করে আসছেন। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে গরুকে যাতে মাত্র ১৫ দিনেই যথেষ্ট মোটা করে তোলা যায়, সে জন্যই ব্যাপকভাবে এ কাজ করা হয়েছে ও হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গরুকে দেয়া স্টেরয়েড থেকে প্রাপ্ত খাদ্য যারা খান, তাদের রক্ত, যকৃৎ, কিডনি, হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে এর অবশিষ্টাংশ অনুপ্রবেশ করে এগুলোর কার্যক্রমকে বিঘিœত করে থাকে।
এ দিকে, বিএসটিআই এবং খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে জীবাণু সংক্রমিত গো-দুগ্ধ বিপণনকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। হাইকোর্টের এই বেঞ্চ পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং দুগ্ধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছে ডেইরি পণ্যের মানোন্নয়নে তাদের সামাজিক দায়িত্ব পালনের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট তহবিলের অর্থ ব্যয় করার জন্য। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দুধের পাশাপাশি গরুর গোশতের বিশুদ্ধতা ও যথাযথ মান বজায় রাখার ক্ষেত্রেও আদালতের নিষেধাজ্ঞা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে, কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে আমাদের দেশে যেভাবে ক্ষতিকর ওষুধ খাইয়ে গরুকে কৃত্রিম পন্থায় মোটা করা হচ্ছে, তাতে এটা জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে। এমন অবস্থায়, যেসব প্রতিষ্ঠান দূষিত দুধ ছাড়াও দূষিত পশুখাদ্য বাজারে বিক্রি করছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে বলা হয়েছে। বলা প্রয়োজন, সরকারের ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ (আইপিএইচ) পরীক্ষা করে সম্প্রতি গরুর দুধ, দই ও গোখাদ্যের ১৯০টি নমুনায় স্যালমোনেলা, ইস্কেরিচিয়া কলি, অ্যাফ্লাটোক্সিন এবং এন্ডোসালফানের মতো প্রাণঘাতী কীটনাশকের অবশেষের অস্তিত্ব পেয়েছে। এ কারণে, এ ধরনের গরুর দুধের পাশাপাশি এগুলোর গোশত কেনা ও খাওয়া নিয়েও জনমনে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছে। সচেতন নাগরিকদের অভিমত, বিশেষত ঈদুল আজহার প্রাক্কালে এ ব্যাপারে সমন্বিত বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া দরকার বাংলাদেশ লাইভস্টক রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরিজ, আইপিএইচ, আইসিডিডিআর,বি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশের নিদারুণ উদ্বেগ ও দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হলো, সরকারের একটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হলেও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনে (বিএসটিআই) আজো ব্যবস্থা করা হয়নি ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিবায়োটিকস আর ডিটারজেন্ট নির্ণয়ের।
আমরা মনে করি, কোরবানির বাজারে যাতে ক্ষতিকর পন্থায় মোটা করা কোনো পশু আনা না যায়, সে জন্য এখন থেকেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ ব্যাপারে আদালত কঠোর নির্দেশ দিলে তা হবে একটি স্মরণীয় উদ্যোগ।


আরো সংবাদ



premium cement