২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রাজধানীতে নিত্যসঙ্গী যানজট

অসহনীয় হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি

-

রাজধানীতে যানজট দীর্ঘ দিনের সমস্যা। কিন্তু এখন তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। গাড়িতে মাত্র ১০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে কখনো দেড়-দুই ঘণ্টাও লাগছে। ঢাকা মহানগরীর লাখ লাখ বাসিন্দাসহ প্রতিদিন রাজধানীতে আগত হাজার হাজার মানুষকে যানজটে দুর্বিষহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ যন্ত্রণা মাথায় নিয়েই প্রতিদিন চলাফেরা করতে হয় তাদের। পরিস্থিতি এমন, অনেক সময় গাড়ির চেয়ে হেঁটে চলার গতি বেশি। কিন্তু হাঁটাপথও তেমন নেই। ফুটপাথগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারেন না।
ব্যস্ততম অনেক সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় গাড়িতে বসে থাকতে হয়। মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও মিরপুর থেকে মতিঝিল-গুলিস্তান আসতে গড়ে তিন ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ ওই সব স্থান থেকে গণপরিবহনে আসতে সময় লাগার কথা বড়জোর এক ঘণ্টা। মতিঝিলে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকায় এ এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষকে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু অসহনীয় যানজট তাদের নিত্যসঙ্গী।
নগরীর যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ অপরিকল্পিত উন্নয়নকাজ। একই কারণে অনেক রাস্তা সরু হয়ে গেছে। ওই সব সড়কে সব সময় যানজট লেগে থাকে। আর ঢাকার কোনো-না -কোনো সড়কে বর্ষাকালেও সেবাদানকারী সংস্থার ‘উন্নয়নকাজ’ করার গৎবাঁধা প্রবণতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ দীর্ঘ দিন ধরে চলমান থাকায় মিরপুর-গুলিস্তান-মতিঝিলে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ অবর্ণনীয়। সমন্বয়হীন উন্নয়ন নগরবাসীর দুর্ভোগের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কে বেআইনিভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখাও যানজটের আরেকটি কারণ। এ ক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা খুব একটা লক্ষ করা যায় না। পাশাপাশি, ঢাকায় যেভাবে মানুষ বাড়ছে; সেই অনুপাতে চলাচলের পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। অথচ একটি নগরীর মোট আয়তনের ৩০ শতাংশ জায়গায় সড়ক থাকার কথা। ঢাকায় সে তুলনায় রাস্তা অনেক কম। ফলে ধারণক্ষমতার অনেক বেশি গাড়ি নগরীতে চলাচল করায় প্রধান প্রধান সড়কে তীব্র যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্র।
২০১৫ সালের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) অনুযায়ী, ঢাকায় দৈনিক প্রায় তিন কোটি ৬০ লাখ যাত্রা বা ট্রিপ হয়। একজন মানুষ কোনো একটি বাহনে উঠে নির্ধারিত গন্তব্যে নামলে একটি ‘যাত্রা’ গণ্য করা হয়। বর্তমানে যানজটে দৈনিক ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজটের আর্থিক ক্ষতি নিয়ে একাধিক গবেষণায় বহু তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক ক্ষতি হচ্ছে যানজটে এবং গড়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা। তবে সড়ক খাতে বিনিয়োগ, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা যেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা। ২০১৬ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নগর পরিস্থিতি-২০১৬ : ঢাকা মহানগরে যানজট, শাসন ব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক গবেষণায় বলা হয়েছিল, ২০০৪ সালে ঢাকার রাস্তায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতিসীমা ছিল গড়ে ২১ দশমিক দুই কিলোমিটার। যানবাহনের পরিমাণ যদি একই হারে বাড়তে থাকে এবং তা নিরসনের কোনো উদ্যোগ না নেয়া হয়, তাহলে ২০২৫ সালে এ শহরে যানবাহনের গতি হবে ঘণ্টায় মাত্র চার কিলোমিটার, যা মানুষের হাঁটার গতির চেয়ে কম। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, এর কারণে রাজধানীতে একটি যানবাহন ঘণ্টায় যেতে পারে গড়ে পাঁচ কিলোমিটার। ১২ বছর আগেও এ গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার।
রাজধানীবাসী এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চান। আমরা মনে করি, রাজধানীর যানজট অন্তত সহনীয় মাত্রায় আনতে হলে প্রয়োজন স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাৎক্ষণিকভাবে যানজটের মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রয়োজন উন্নয়নকাজে যথাযথ সমন্বয় এবং যখন তখন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করা। স্থায়ী সমাধানে দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজন দেশে ভারসাম্যমূলক উন্নয়ন, যাতে সব স্থান থেকে বড় কোনো প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে ঢাকামুখী হতে না হয়। এ জন্য চাই সব জায়গায় সেবা খাতের উন্নয়ন। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজন ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। এ জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিকল্প নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবার কবরে শুয়ে ছেলের প্রতিবাদ ইসরাইলি হামলায় গাজায় আরো ৭১ জন নিহত পানছড়ি উপজেলায় চলমান বাজার বয়কট স্থগিত ঘোষণা আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেছে : দুদু

সকল