২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
দুদক চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি

কথা বলাতেও দায়িত্বশীলতা কাম্য

-

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ওপর নানা কারণে মানুষের আস্থা এখন তলানিতে। কারণটা সবাই জানেন। সমাজে বড় বড় দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে, কিন্তু দুদক এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বা নিতে পারছে না। যারা প্রভাবশালী নয়, যারা ছোটখাটো দুর্নীতির সাথে জড়িত, দুদকের প্রধান টার্গেট যেন তারাই।
এর আগে স্কুলশিক্ষকদের অনুপস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে দুদক ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। এমনকি হাইকোর্টও মন্তব্য করেছিলেন, ব্যাংকগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি দুদকের চোখে পড়ে না, তারা স্কুলশিক্ষকদের নিয়ে ব্যস্ত। বর্তমান সরকারের সময় যেসব মেগা উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হচ্ছে, সেগুলো নির্ধারিত সময়ে সম্পন্ন হচ্ছে না। এটা কতটা যৌক্তিক কারণে আর কতটা বিশেষ মহলের অনৈতিক স্বার্থের কারণে, তা নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। প্রকল্প বিলম্বিত হলে অর্থব্যয় ও বরাদ্দ বেড়ে যায়, জনদুর্ভোগ বাড়ে, রাষ্ট্রের বিরাট ক্ষতি হয়; সেটা এক দিক। কিন্তু গণমাধ্যমে বহু রিপোর্ট বেরিয়েছে, বিদেশে একই কাজ করতে যে টাকা ব্যয় হয়, বাংলাদেশে একই কাজ করতে এর পাঁচ-ছয় গুণ টাকা খরচ করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ আছে। রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র প্রকল্পে বালিশ কেনা, এসব দুর্নীতির একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। তবে এসব ‘সাগরচুরি’র ঘটনায় দুদককে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
এমনই এক প্রেক্ষাপটে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দুদক বেশির ভাগই চুনোপুঁটিদের নিয়ে অনুসন্ধান করে। রাঘব বোয়ালদের নিয়ে কাজ করতে সমস্যা হয়। যেসব অভিযোগ বা মামলায় দুদক তদন্ত করছে, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগই চুনোপুঁটির বিরুদ্ধে।’ প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, আসলে ছোট গাছ উপড়ে ফেলা যত সহজ, বড় গাছ উপড়ানো তত কঠিন।’ তার এই বক্তব্য হয়তো এ দেশের বাস্তবতারই প্রতিফলন। কিন্তু এটি আমাদের আশ্বস্ত করে না মোটেও। দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা কতটা ঝুঁকি নিচ্ছেন, তা আমরা জানি না। দুর্নীতিবাজদের হাতে কেউ লাঞ্ছিত, নিগৃহীত বা জীবনের হুমকির মুখোমুখি হয়েছেন; এমন কোনো দৃষ্টান্ত আমাদের সামনে নেই। অথচ তেমনটাই হওয়ার কথা। বরং সমাজে উল্টো উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন দুদক কর্মকর্তা। পুলিশের এক বড় কর্মকর্তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন ওই কর্মকর্তার বিরাট অপকর্ম ধামাচাপা দেয়ার কথা বলে। এই ন্যক্কারজনক কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে এবং সমাজে ধিকৃত হয়েছে। দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠানেই যখন দুর্নীতি বাসা বাঁধে, তখন সাধারণ মানুষের আর কোনো ভরসার জায়গা থাকে না। দুদক চেয়ারম্যানের স্বীকারোক্তি তাই আমাদের কোনোভাবেই আশ্বস্ত করে না।
দুদক চেয়ারম্যান বলেছেন, বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলের প্রায় ১৫ জন এমপি-মন্ত্রী তাদের অনুসন্ধানে রয়েছেন। তা ছাড়া, অন্য দুই দলের প্রায় ৩৭ জন এবং আমলাদের মধ্যে প্রায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তারা অনুসন্ধান চালাচ্ছেন। কিন্তু সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেখানে দুর্নীতির কর্কট ছড়িয়ে পড়েছে, তখন এই সংখ্যা কি যথেষ্ট?
দুদক চেয়ারম্যান আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে তথ্য পাচার হয়ে যায়। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেই কিভাবে যেন সেই তথ্য অপরাধীর কাছে চলে যাচ্ছে।’ তিনি নিজেদের পক্ষে সাফাইও গেয়েছেন এই বলে যে, দুদকে যারা কাজ করে, তারা এ সমাজেরই অংশ। সমাজের অন্যান্য জায়গায় যা হয়, তা আমাদের এখানে যে হয় না, তা নয়। আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। সে দায় আমাদেরই।’ যা হোক, এই দায় স্বীকার একটি ইতিবাচক দিক।
আমাদের বিবেচনায়, যারা দায়িত্বশীল পদে থাকেন, তাদের কথাও বলা দরকার দায়িত্বশীলতার সাথে। যখন সারা দেশ দুর্নীতিতে সয়লাব, তখন ‘পেনাল কোড’ (সিআরপিসি) অনুযায়ী, সরল বিশ্বাসে কৃতকর্ম অপরাধ নয়Ñ এ ধরনের বক্তব্য না দেয়াই উচিত। এটা ঢলের সময় বাঁধ কেটে দেয়ার মতো ব্যাপার। আমরা সমাজের অংশ; তাই সমাজে দুর্নীতি হলে আমার এখানেও হবে, এ কথাটিও তেমনই।


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল