১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হারে তারতম্য

মানসম্পন্ন শিক্ষার আয়োজন নেই

-

দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। এবার আগের চেয়ে পাসের হারের পাশাপাশি ভালো ফলের হারও বেড়েছে। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি কুমিল্লা বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সর্বনিম্ন পাসের হার চট্টগ্রাম বোর্ডে ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। পাসের হার সর্বোচ্চ হলো, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পড়াশোনার বিষয়বস্তু ও মান একই রকমের হলেও পাসের হারের দিক দিয়ে দুটো বোর্ডের মধ্যে প্রায় ২৬ শতাংশের মতো পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে। এ ব্যবস্থায় এখনো যে সমতা আসেনি, ফলাফলের এ বিরাট তারতম্য দেখে সেটি বোঝা যায়।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে চট্টগ্রাম বোর্ডে পাস করেছে ৬২ শতাংশের কিছু বেশি। অন্য দিকে কুমিল্লা বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ শতাংশের চেয়ে কিছু কম। দুটো বোর্ডের অবস্থান পাশাপাশি এবং সংলগ্ন অঞ্চলের হওয়ায় অনেক দিক দিয়ে সামঞ্জস্য রয়েছে। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের এত তারতম্যের কারণ কী? কুমিল্লা বোর্ডে পাসের হার এত বেশি কিভাবে হলোÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বোর্ডের চেয়ারম্যান তাদের বিভিন্ন কর্মতৎপরতার কথা তুলে ধরলেন। তাতে এটা প্রমাণ হয়, যারা খারাপ ফলাফল করেছেন তারা তেমন তৎপর ছিলেন না। বোর্ড কর্মকর্তাদের ‘তৎপরতা’ই কি পাসের হার বাড়িয়েছে? এমনটা আসলে যুক্তিযুক্ত হতে পারে না। একইভাবে, এবারের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গ্রামের ছাত্ররা পিছিয়ে পড়ছে। ৫০ শতাংশেরও কম পাসের হারÑ এমন বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মফস্বলের। ঢাকা বোর্ডের অধীনে রাজধানী ঢাকা শহরেই সর্বোচ্চ পাসের হার ৮৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ শহরের তুলনায় গ্রামে অনেক কম। আবার এ সুযোগ শহরে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও গ্রামে উল্টো কমছে। শহরের ভালো শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। গ্রামে দুটোরই অভাব। ভালো শিক্ষকেরা গ্রামে যেতে চান না। একইভাবে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগও সেখানে নেই। আবার ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলেও সেখানে পর্যাপ্ত ছাত্র না পাওয়ার শঙ্কাও থাকে। এই প্রবণতা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। এবার পাসের হার হঠাৎ করে বেড়ে গেল। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এবার ইংরেজি প্রশ্নপত্র ‘সোজা’ হয়েছে তাই পাসের হার বেড়ে গেছে। একজন শিক্ষাবিদ ব্যাখ্যা করে বলেছেন, পাঠ্যপুস্তক আর পড়ানোর পদ্ধতিতে পরিবর্তন হয়ে যায়নি। কোচিং ‘আরো দক্ষতার সাথে’ চলছে বলে জানালেন তিনি। দুঃখ করে তিনি বললেন, দক্ষতার সাথে পাঠদান শ্রেণীকক্ষেই হওয়ার কথা ছিল। ব্যাপারটি সত্যিই যদি ইংরেজি সহজ প্রশ্নের জন্য হয়ে থাকে তাহলে আগের বছরের ছাত্রদের এ ব্যাপারে ‘বঞ্চিত’ বলতে হবে। কারণ তারা কেবল কঠিন প্রশ্নপত্রের কারণে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ফলে তারা একটি বছরও হারিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপু মনি উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছেন। সরকারের কর্তব্যক্তিরা বরাবরের মতো ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট। বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক অসঙ্গতি রয়ে গেছে। ফলে নানা বৈষম্যও বিরাজ করছে শিক্ষাপদ্ধতির মধ্যে। দরকার এসব অসঙ্গতি শনাক্ত করে এগুলো দূর করা। বিগত এক দশকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। বাস্তবে দেখা গেছে, পাসের হার ও ভালো পাসের হার বেড়েছে; কিন্তু শিক্ষার মান গেছে কমে। উচ্চশিক্ষাক্ষেত্রে তার প্রমাণ মিলেছে। প্রয়োজন সর্বস্তরে মানসম্পন্ন শিক্ষার আয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement