২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
চন্দ্র বিজয়ের ৫০ বছর

বিজ্ঞানের যুগান্তকারী অর্জন

-

মানবজাতির ইতিহাসে চন্দ্রাভিযান এক যুগান্তকারী ঘটনা। পৃথিবীর মানুষ ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই প্রথম চাঁদের বুকে পা রাখেন। সেটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সারা বিশ্বের মানুষ বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও পরম বিস্ময় নিয়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত সেই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন। আগামী শনিবার সেই ইতিহাস সৃষ্টির ৫০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে। সেই অভিযান শুরু হয়েছিল চার দিন আগে ১৬ জুলাই, ১৯৬৯। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ভোর ৬টা ৪৫ মিনিটে তিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স নভোচারীর পোশাক পরে পেছনে ফিরে সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে ধীরে ধীরে রকেটের ভেতর অদৃশ্য হয়ে যান। সকাল ৯টা ৩২ মিনিটে ৭৬ লাখ পাউন্ড জ্বালানিভরা নাসার ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের ইঞ্জিনের অংশ প্রজ্বলিত হয়। এরপর উড়ে যায় মহাকাশের দিকে। চাঁদের মাটিতে পৌঁছতে তাদের সময় লেগেছিল চার দিন। ২০ জুলাই চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণের পর তিন মহাকাশচারীকে নিয়ে এই উপগ্রহের মাটিতে নামে চন্দ্রযান। চাঁদের বুকে প্রথম পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নিল আর্মস্ট্রং। তার পরে এডুইন অলড্রিন। মাইকেল কলিন্স ছিলেন চন্দ্রযানের পরিচালনার দায়িত্বে। তাই তিনি চাঁদের মাটিতে পা রাখার সুযোগ পাননি।
‘একজন ব্যক্তির জন্য এটি একটি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ, কিন্তু মানবতার জন্য এক বিশাল অগ্রযাত্রা।’ চাঁদে অবতরণের পর নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে আর্মস্ট্রংয়ের এই বিখ্যাত উক্তি আজো স্মরণীয় হয়ে আছে। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, ৫০ বছর আগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কী অসামান্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছিল।
চাঁদে প্রথম পা রাখার পর গত অর্ধশতকে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপুল অগ্রগতি অর্জন করেছে মানুষ। বলা যায়, ওই চন্দ্রাভিযানের কারণেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, যা বিশ্ববাসীর প্রাত্যহিক জীবনেও নানাভাবে প্রভাব ফেলছে।
চন্দ্র জয় করে তিন মহাকাশচারী বদলে দিয়েছিলেন মানবসভ্যতার ইতিহাস। তবে এই অভিযান বিতর্কমুক্ত থাকেনি। অনেক মহল থেকে এই অভিযান ও চাঁদে পা রাখার বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। বিতর্ক যাই থাকুক না কেন, এ বছর সারা বিশ্ব ওই অভিযানের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করছে।
চাঁদে অভিযানের চেষ্টা এখনো থেমে নেই। চলতি বছরের প্রথম মাসেই চীনের একটি মহাকাশযান চাঁদ ঘুরে এসেছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের সবচেয়ে দুরূহ স্থানে মহাকাশযানটি অবতরণ করেছে বলেও দাবি করেছে চীন। গত জানুয়ারিতে চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন (সিএনএসএ) ঘোষণা করে, পৃথিবী থেকে চাঁদের যে পাশটি দেখা যায় না, সে পাশেই তাদের পাঠানো মহাকাশযান চ্যাং ই-৪ অবতরণ করেছে। মহাকাশে আধিপত্য বিস্তারে উঠেপড়ে লেগেছে পরাশক্তিগুলো। চন্দ্রাভিযানের চেষ্টায় আছে ভারতও। চলতি সপ্তাহে একবার চাঁদের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার চেষ্টা করে ভারতের ‘চন্দ্রযান-২’। তবে কারিগরি ত্রুটির কারণে যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। এ মাসে আবার চেষ্টা চালাবে ভারত।
অজানাকে জানার জন্য মানুষের যে সুতীব্র আকাক্সক্ষা তা এখন বহু দূর বিস্তৃত হয়েছে। মহাশূন্য অভিযানের স্তর এতটাই উন্নত হয়েছে যে, এখন শুধু চাঁদ নয়, মানুষের লক্ষ্য স্থির হয়েছে মঙ্গল গ্রহের দিকে। আমাদের চিরচেনা পৃথিবী যেভাবে দিনের পর দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে, তাতে মানুষকে নতুন আবাসস্থল খুঁজতে হবে বলে সতর্ক করেছেন অনেক বিজ্ঞানী ও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। তাই এক দশকের মধ্যেই মঙ্গলে মানুষের দ্বিতীয় আবাস গড়ে তোলা যায় কি না সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একাধিক নভোযান এরই মধ্যে মঙ্গলে পৌঁছেছে এবং সেখানে গবেষণা চালিয়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারায় অদূর ভবিষ্যতে মানুষ যদি সশরীরে সেই লাল গ্রহে পদার্পণ করে, তাহলে অবাক হওয়ার বেশি কিছু থাকবে না।
চন্দ্র বিজয়ের অর্ধশত বছর পূর্তিতে আমরা বিজ্ঞানের অধিকতর সাফল্য এবং মানবজাতির বৃহত্তর কল্যাণে তার ব্যবহার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement