২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান

গণতন্ত্র ও দুর্নীতির সম্পর্ক বুঝতে হবে

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন, ‘যদি দুর্নীতির কারণে উন্নয়নের সব অর্জন নষ্ট হয়ে যায়, সেটা হবে খুবই দুঃখজনক। এটা কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না।’ শনিবার নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তারা তৃণমূল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতি রোধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন, যাতে করে আমাদের এত কষ্টের অর্জনগুলো দুর্নীতির কারণে নষ্ট না হয়ে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীনের থেকেও আমাদের প্রবৃদ্ধি বেশি। আমাদের প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে ৮ দশমিক ১ ভাগে পৌঁছেছে। এ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। আর এটা আমরা করতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।’
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে একজন ভিক্ষুকও থাকবে না। একজন মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একজন মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না। তিনি বলেন, অন্তত মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করব।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার আগেও ছিল। ২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু সেই অঙ্গীকার কতটা পূরণ হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাপক সংশয় আছে। সংশয় আছে বলেই প্রধানমন্ত্রীকে আজো বলতে হচ্ছে, দুর্র্নীতি যেন উন্নয়নের সব অর্জন খেয়ে না ফেলে, সেদিকে নজর দিতে হবে।
সবাই জানেন, গত এক দশকে দেশে দুর্নীতি কমেনি, বরং বহুগুণ বেড়েছে। এতটাই বেড়েছে যে, খোদ হাইকোর্টও মন্তব্য করেছেন, ‘দুর্নীতির সাথে জড়িত রাঘব বোয়ালদের ছেড়ে দিয়ে শুধু দুর্বলদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দুদক। যেখানে ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হচ্ছে, সেখানে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকেরা স্কুলে যাচ্ছেন কি যাচ্ছেন না, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।’ দুর্র্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে দুদক যখন হাসপাতালে ডাক্তারের উপস্থিতি আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতির খতিয়ান নিতে শুরু করে তখনই বোঝা যায়, ‘পথিক পথ হারিয়েছে।’
দুর্নীতি আর দেশের শাসনব্যবস্থার মধ্যে একটি জোরালো সম্পর্ক আছে। সেটা আমাদের সরকার বা সরকারপ্রধান নিশ্চয়ই জানেন। দুর্নীতিবিরোধী ও জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল গত বছর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, যেসব দেশ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে, মূলত তারাই গণতন্ত্র নিয়ে সঙ্কটে পড়েছে। দেখা গেছে, উচ্চ মাত্রার দুর্নীতির দেশগুলোর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক অধিকার ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। আবার সেসব দেশেই দুর্নীতির বিস্তার ঘটে, যেখানে গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল।
আমাদের দেশে গণতন্ত্রের কী অবস্থা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো কোন পর্যায়ে কতটা কার্যকর রয়েছে, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। দুর্নীতি নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, মাঝারি বা নিচের স্তরের দুর্নীতি ধরলেই দুর্নীতি কমবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে ওপর থেকে। কেননা, দুর্নীতি ওপর থেকে শুরু হয়, তারই জের নিচ পর্যন্ত চুইয়ে পড়ে। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার একটি দৈনিককে বলেছিলেন, দুর্নীতি তো করেন রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হলে সরকারের নীতিনির্ধারক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত, আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন অর্থসম্পদ যাদের পাওয়া যাবে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেউ যেন দলীয় বা রাজনৈতিক আনুকূল্য না পান, তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে এখন এমন কোনো মানুষ কি আছেন যিনি বিশ্বাস করবেন, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তার বিরুদ্ধে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে দলীয় বা রাজনৈতিক আনুকূল্য ছাড়াই আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ সম্ভব?’ এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ আছে।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল