২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সীমান্ত হত্যা চলছে

বিএসএফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই

-

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সংসদে জানিয়েছেন, ১০ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। সংসদে দেয়া মন্ত্রীর এ পরিসংখ্যান যখন দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, একই দিনের সংবাদপত্রে বিএসএফ কর্তৃক দুই বাংলাদেশীকে হত্যার খবরও প্রকাশিত হয়েছে পাশাপাশি। মন্ত্রীর দেয়া হিসাব যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলেও বিশ্বের সবচেয়ে খুনপ্রবণ একটি সীমান্ত বলতে হবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে। বাস্তবে বিএসএফের বাংলাদেশী নাগরিক হত্যার পরিসংখ্যান আরো অনেক বেশি। অন্যান্য পরিসংখ্যানে যা প্রতিফলিত হয়ে আসছে। প্রথমত মানুষ হত্যার বিপজ্জনক পরিসংখ্যানটা প্রকাশ করতে হবে। তারপর এসব হত্যার বিচারের বিষয়টি সামনে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে চার হাজার কিলোমিটারের সীমান্ত রয়েছে। এটি বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত কিন্তু প্রতিবেশী কর্তৃক নাগরিক হত্যার দিক দিয়ে প্রথম। শুধু প্রথম নয়, পৃথিবীতে আর কোনো সীমান্ত এমন নেই যেখানে ঠুনকো কারণে প্রতিবেশীদের হত্যা করা ছাড়াও নানা ধরনের হয়রানি করে থাকে প্রতিবেশী দেশ। মন্ত্রী বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী হত্যার যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন সেখানে প্রকৃত চিত্র ফুটে ওঠেনি। আমরা যদি অধিকারের মানবাধিকার প্রতিবেদন দেখি তাহলে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী নির্যাতনের চিত্র কিছুটা বোঝা যাবে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে মোট ১৯ বছরে বিএসএফ এক হাজার ১৪৪ জনকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া নানাভাবে যে নির্যাতন তারা বাংলাদেশীদের ওপর করে চলেছে, চরম শত্রুভাবাপন্ন কোনো দেশের বাহিনীও এমনটা করে না। এমনকি তাদের সাথে চরম শত্রুতা রয়েছে যে পাকিস্তানের সেই সীমান্তেও এমনটা দেখা যায় না। ওই ১৯ বছরে তারা আহত করেছে এক হাজার ৭৮ জন বাংলাদেশীকে। অপহরণ করেছে এক হাজার ৩৬৭ জনকে। লুটের ঘটনা ঘটিয়েছে ১৫৭টি। এমনকি ধর্ষণ করেছে ১৫টি। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে সীমান্ত হত্যার ব্যাপারটি তোলা হয়। এ নিয়ে আলাপ আলোচনাও হয়। কার্যত ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের আচরণের কোনো পরিবর্তন হয় না। ভারতের সাথে আরো সীমান্ত রয়েছে চীন, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের। এসব দেশের একটির সাথেও ভারতের এমন হিংস্র ও মারকুটে সম্পর্ক দেখা যায় না। বরং এসব দেশের চেয়ে ভারতের আনুষ্ঠানিক বন্ধুত্ব বাংলাদেশের সাথে বেশি। এই বন্ধুতা আরো উষ্ণতা পেয়েছে বিগত এক যুগে। কিন্তু এই সময়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বন্দুকের নলের গর্জন কিছুমাত্র কমেনি। বরং বর্তমান সরকার প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার প্রথম বছর ২০০৯ সালে অধিকারের হিসাবে বিএসএফ ৯৮ জন বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য বিএসএফ সদস্যদের কোনো বিচারের ব্যবস্থা নেই। ফেলানী হত্যার বিচার যেভাবে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে তাতে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। কিশোরী বাংলাদেশী ফেলানীকে হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। যিনি বন্দুকের ট্রিগার টিপলেন তার অপরাধ এরপরও প্রমাণ হয়নি। এ অবস্থায় বিএসএফ নিশ্চয়ই বাংলাদেশী হত্যার সনদই পেল। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে এ কেমন অদ্ভুত বন্ধুত্বভাব!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অন্যায় অত্যাচারকে কমিয়ে দেখানোর মধ্যে আমাদের কোনো লাভ নেই। বাস্তবতা সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে। আমাদের এ কথা মনে রাখতে হবে, ভারতীয়রা তাদের চির বৈরী পাকিস্তানিদের সাথে এমন শত্রুতাপন্ন আচরণ করছে না, যা আমাদের সাথে করছে। যে কারণে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তকে ‘হত্যার দেয়াল’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। বৈরী আচরণের পরিসংখ্যানটা নিয়ে ভারতের সাথে আলোচনা করতে হবে। কেন বাংলাদেশের সাথে এমন শত্রুতা তার হিসাব চাইতে হবে। এর মধ্যে লজ্জার কিছু নেই।


আরো সংবাদ



premium cement