২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বৃষ্টি ও ঢলে বন্যার পদধ্বনি

প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি

-

বাংলাদেশে এখন নিয়মিতভাবে প্রতি বছরই টানা বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে আসা ঢলের পানির আগাম বন্যা দেখা দেয়াটা নিয়মে পরিণত হতে যাচ্ছে। এই বন্যার কবলে পড়ে আমরা প্রতি বছর প্রচুর ফসলহানিসহ অনেক জানমালের ক্ষতির মুখোমুখি। বন্যাকবলিত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। আমরা যেন এর অসহায় শিকার। এবারো টানা বৃষ্টির ও ঢলের পানিতে দেশের অনেক এলাকা পানিতে ডুবে গেছে, শুনতে পাচ্ছি বন্যার আগাম পদধ্বনি।
খবরে প্রকাশ, কয়েক দিন আগে টানা বর্ষণে ও পাহাড়ি ঢলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী চার জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনা, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটির কিছু এলাকায় এরই মধ্যে বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আরিফুজ্জামান ভূঁইয়ার দেয়া তথ্য মতে, দেশের ১৩টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দু-এক দিনে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।
এদিকে, পাহাড়ি ঢলে ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকাও প্লাবিত। এর ফলে কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে, অনেক ইরি-বোরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় দুই হাজার পরিবার। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার সাথে চরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১০ হাজারের মতো পরিবার। নদীতীরের ২০টির মতো বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোনার কলমাকান্দায়ও অনেক মানুষ পানিবন্দী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এভাবে চট্টগ্রামসহ আরো অনেক জায়গা পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
এখন সবার আগে প্রয়োজন পানিবন্দী মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করে তাদের কাছে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া। সেই সাথে যেসব জায়গা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর জন্য বন্যা মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়া। তাছাড়া বন্যা-পরবর্তী সময়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত নতুন করে কৃষিকাজে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা জরুরি। এজন্য কৃষকদের জন্য প্রয়োজনীয় ঋণ, বীজ, সার সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
আমরা আশা করব, সরকার বন্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি যথাসম্ভব কমিয়ে আনার ব্যাপারে সচেতন ভূমিকা রাখবে। কারণ, এর মাধ্যমেই বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কার্যকরভাবে মোকাবেলা সম্ভব। তাছাড়া বন্যা-পরবর্তী সময়ে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা জোরদার করাও জরুরি। মনে রাখতে হবে, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি লাঘবে আগাম প্রস্তুতি একটি মোক্ষম হাতিয়ার।

 


আরো সংবাদ



premium cement