১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ধানের দাম আরো কমেছে

ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিন

-

সারা দেশে কৃষকদের মধ্যে একটি নীরব হাহাকার চলছে। কারণ, ধানের দাম আরো কমেছে এবং কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ আরো বেড়েছে। গত মে মাসে কৃষকেরা ক্ষেতের পাকা ধানে আগুন লাগিয়ে এর প্রতিবাদ করেছেন, রাস্তায় মণকে মণ ধান ঢেলে দিয়েছেন, ছিটিয়ে দিয়েছেন, কেউ বা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিলিয়ে দিয়েছেন।
মে মাসে কৃষক যখন ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দেন তখন আমরা জেনেছি, এবার ধান চাষ করে প্রতি বিঘায় তাদের দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। রাজধানীতেও প্রতিবাদ হয়েছে। ডাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সে আন্দোলনে শামিল ছিল। আর এতে অন্তত একটা কাজ হয় যে, ধানের দরপতন ঠেকাতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান জোরদার ও সম্প্রসারণ করার কথা বলা হয়। ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে প্রায় ১০ লাখ টন চাল রফতানির ঘোষণাও দেয়া হলো। কিন্তু এসব পদক্ষেপে তেমন কাজ হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, সংবাদপত্রে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত সপ্তাহে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধানের দাম আরো কমেছে। একটি দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, হাটবাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। অথচ গত এপ্রিল-মে মাসে ধানের দর ছিল এর চেয়ে ৫০ থেকে ৭০ টাকা বেশি।
দেশের প্রধান কয়েকটি ধান-চালের বাজারের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকাটি জানায়, কুষ্টিয়া, নওগাঁ, বগুড়া ও মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাটে ধানের দাম গত এক সপ্তাহে প্রতি মণে ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাশাপাশি, ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানও চলছে ধীরগতিতে। সরকারের এ অভিযান সফল হচ্ছে না। গত ২৫ এপিল থেকে সারা দেশে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ টন। কিন্তু গত আড়াই মাসে ৮৫ হাজার ৫০১ টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে সরকার; যা লক্ষ্যমাত্রার এক-চতুর্থাংশ মাত্র। অন্য দিকে, ১১ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ছয় লাখ ৭১ হাজার টন বা প্রায় ৬১ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলেছিলেন, ‘সেদ্ধ চাল রফতানির অনুমতি দিলে তারা বিপুল চাল রফতানি করতে পারবেন। সেটি হলে চালকল মালিকেরা বাজার থেকে ধান কেনা বাড়িয়ে দেবেন। তাতে ধানের দাম বাড়বে।’ কিন্তু ঘোষণার আড়াই মাস পার হলেও রফতানির সেই প্রস্তাব কার্যকর হয়নি।
কৃষকদের অভিযোগ, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে সেই দামে তাদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ধানের দাম আরো কমার পেছনে বেশ কিছু স্থানে মধ্যস্বত্বভোগীদের সিন্ডিকেট দায়ী বলে মনে করছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত কয়েক বছরে চাহিদার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হলেও এখনো চাল রফতানি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বাম্পার ফলনে আনন্দের বদলে দেশের কৃষকের মুখ এখন মলিন। সরকারি ধান-চাল সংগ্রহে জটিলতা এবং মিল মালিক ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে কৃষকদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে খুচরা পর্যায়ে ধানের দাম কমে গেছে। দেশের বেশির ভাগ জায়গায় উৎপাদন খরচের তুলনায় কম দামে ধান বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement