১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাজেটের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়ানো

সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ

-

এবার বাজেট ঘোষণার পর থেকে ভোগ্যপণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বাজেটকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন একশ্রেণীর ব্যবসায়ী। বাজেটে যেসব পণ্যে ভ্যাট বা ট্যাক্স বাড়ানো হয়নি, সেগুলোর দামও বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা উভয় বাজারে দাম বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষণীয়। এতে বিপাকে পড়েছেন সীমিত আয়ের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। টিকে থাকার তাগিদে তারা বাধ্য হয়ে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু কেনা থেকে বিরত থাকছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, বাজেটে ভোগ্যপণ্যের একাংশের ৫ শতাংশ আগাম কর নির্ধারণ করা হয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে শুল্ক বাড়ানোর ফলে তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, চিনি ও গুঁড়ো দুধের দাম বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে গুঁড়ো দুধ ও চিনির। এ দিকে, গ্যাসের বর্ধিত দাম ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ায় পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলে কাঁচাবাজারে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা।
নয়া দিগন্তের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাইকারি বাজারে গত শুক্রবার কেজি প্রতি মার্কস গুঁড়ো দুধ ৫৫-৭০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয় ৪৯৫-৫০০ টাকায়। আর ২০ টাকা বেড়ে ডানো বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৫৯০ টাকা। ঈদুল ফিতরের আগে পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি আদার দাম ছিল মানভেদে ৭০-১০০ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে দাম এখন ১৫০-১৬০ টাকা। এক সপ্তাহে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৮-১০ টাকা। রসুনের দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা দরে। অথচ রোজার ঈদের সময় প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ৮০-১১০ টাকা। পাইকারি বাজারে পামঅয়েলের দাম লিটার প্রতি ৩-৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা। সয়াবিন তেল ৭৫-৭৭ টাকায়। এ ছাড়া বেড়েছে গরম মসলার দামও। এলাচ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকায় ও দারুচিনি ৩৫৬ টাকায়। ঈদের আগে এলাচ বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০ টাকা এবং দারুচিনি ৩২০ টাকায়।
খুচরা বাজারে চলছে একপ্রকার অরাজকতা। এক বাজারের সাথে অন্য বাজারের দামে মিল নেই। এমনকি, মিল নেই পাশের দোকানের সাথেও। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার সুযোগে ব্যবসায়ীরা খেয়ালখুশি মতো ভোক্তার কাছ থেকে দাম রাখছেন। লক্ষণীয় বিষয়, প্রতি বছর সংসদে বাজেট পেশের পর থেকেই জিনিসপত্রের দাম বাড়ানোর অসুস্থ প্রবণতা অসৎ ব্যবসায়ীদের মধ্যে দেখা যায়। তারা পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় নামেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে বাজারের ওপর নজরদারি যেভাবে করা প্রয়োজন, তা করা হয় না। ফলে সাধারণ নাগরিকের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। বাড়তি খরচে তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। এ থেকে দেশবাসী পরিত্রাণ চান স্থায়ীভাবে। কিন্তু নাগরিকদের পরিত্রাণ দিতে সরকারের যে কর্মকর্তাদের তৎপর থাকার কথা, তারা অর্পিত দায়িত্ব পালন করছেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
আমরা মনে করি, এ ক্ষেত্রে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র সাধারণ নাগরিকের কাছ থেকে ইচ্ছে মতো দাম নিতে পারছে। এ প্রবণতা শুধু বাজেট-পরবর্তী সময়ে নয়, প্রতি বছর রমজান মাস ছাড়াও বারবার দেখা যায়। সরকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নজরদারি বাড়িয়ে তা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে, যাতে পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement