২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
তিস্তার পানি বনাম বাংলাদেশের ইলিশ

মমতার বক্তব্য সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য

-

ভারত আন্তর্জাতিক নদী তিস্তার পানি থেকে বাংলাদেশকে নানা অজুহাতে বঞ্চিত করে চলেছে। বাংলাদেশ বারবার বিষয়টি উত্থাপন করে ভারতের কাছ থেকে তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দাবি করলেও ভারত তাতে কর্ণপাত করছে না।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধান ভানতে শিবের গীত গেয়েই যেন বললেন : তিস্তার পানি দিইনি বলে বাংলাদেশ ইলিশ দিচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় গত মঙ্গলবার তিনি এ কথা বলেন। তিনি বিধানসভা অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিধায়ক রহিমা বিবির এক প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, ‘বাংলাদেশকে আমরা জল দিতে পারিনি। তাই ওরা আমাদের ইলিশ দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুদেশ। কিন্তু তিস্তায় জল নেই। কোথা থেকে জল দেবো।’
তার বক্তব্য এ কথাই জানিয়ে দেয়Ñ ভারত এত দিন তিস্তার পানি নিয়ে যত কথা বলুক, এখন প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে এ কথা বলে দিতে যে, বাংলাদেশকে তিস্তার পানি দেয়া হবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ ধরনের বক্তব্যের পরও বাংলাদেশকে বন্ধুদেশ বলে অভিহিত করতে ভোলেননি। কিন্তু তার এ বক্তব্য থেকে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এটা কি বন্ধুর প্রতি বন্ধুর আচরণ, না চূড়ান্ত শত্রুতামূলক আচরণ।
আমরা মনে করি, ‘তিস্তায় জল নেই, কোথা থেকে বাংলাদেশকে জল দেবো?’ এ ধরনের বক্তব্য মমতার প্রত্যাহার করা উচিত। ভারত শুষ্ক মওসুমে আন্তর্জাতিক নদীর পানি থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করবে এবং ভরা বর্ষায় সব বাঁধ খুলে দিয়ে বাংলাদেশে অকালবন্যা সৃষ্টির যে নীতি অবলম্বন করে চলেছে, তা কোনো দিন বন্ধুসুলভ আচরণ হতে পারে না।
জানা যায়, ভারত ২৩ বছর আগে স্বাক্ষরিত চুক্তি মতে, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা ৬৫ শতাংশ পানি শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশকে দেয়া থেকে বঞ্চিত করে আসছে। চুক্তি মতে, শুষ্ক মওসুমে বাংলাদেশ গঙ্গার ৬৫ শতাংশ পানি নিশ্চিত পাওয়ার কথা। এ চুক্তি-পরবর্তী সময়ে (১৯৯৭-২০১৬) তথ্য-পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশ ওই ৬৫ শতাংশ পানি কখনোই পায়নি। যদিও বাংলাদেশে বরাবরই শুষ্ক মওসুমে উচ্চহারে পানির চাহিদা আছে। স্থানীয় ও বিদেশীদের সমন্বয়ে গঠিত চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল জানিয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারত ফারাক্কায় পানির হিস্যা-সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে ৩০ বছর আগে। এরপর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেব গৌড়া আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন এই বিশ্বাসে যে, ভারত আর এককভাবে গঙ্গার পানি শুষ্ক মওসুমে প্রত্যাহার করবে না। ওপরে উল্লিখিত প্যানেলের প্রকাশিত সমীক্ষা প্রকাশ করা হয় এ বছরের শুরুতে ক্রিয়েটিভ কমন অ্যারেঞ্জমেন্টের আওতায়। তাদের গবেষণায় এ ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করা হয়। এতে গঙ্গার পানির ন্যায্য বণ্টন সম্পর্কে প্রাপ্ত পানির পরিমাণগত বিশ্লেষণও তুলে ধরা হয়। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (জিএমবি) নদীব্যবস্থা হচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির আধার। জিএমবি নদীব্যবস্থার ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে শুধু গঙ্গা নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি রয়েছে। ভারত যখন ১৯৭৫ সালে গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ গড়ে তোলে তখন থেকেই বাংলাদেশ গঙ্গার পানি থেকে বঞ্চিত। এরপর তিস্তাসহ অন্যান্য নদীর পানির হিস্যা নিয়ে বাংলাদেশের সাথে বিরোধ বাধে; কিন্তু ভারত বাংলাদেশের বাদ-প্রতিবাদে কখনোই কার্যকর সাড়া দেয়নি। আমরা আশা করব, ভারত এবার অন্তত এ ব্যাপারে অভিন্ন নদীগুলোর ন্যায্য পানির হিস্যা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement