২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বাজেটে দাম বৃদ্ধির প্রভাব

ভয়াবহ বিপাকে মধ্যবিত্ত শ্রেণী

-

বাজেটের প্রভাবে নাগরিকদের খরচের খাতায় যোগ হয়েছে বাড়তি বহু অর্থ। বেড়েছে অনেক নিত্যপণ্যের দাম। সর্বশেষ যুক্ত হলো জ্বালানি গ্যাসের অকারণ বর্ধিত মূল্য। এতে চতুর্মুখী ব্যয় বৃদ্ধির চাপে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোটি কোটি মানুষ।
এবারের বাজেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সুনির্দিষ্টভাবে বাজেটের যেসব উদ্যোগ মধ্যবিত্তকে চাপে ফেলবে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে করমুক্ত আয়ের সীমা না বাড়ানো, টেলিফোনে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো, পোশাকে ভ্যাট বাড়ানো, বাড়ি ভাড়া, সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় উৎসে কর বাড়ানো এবং খাদ্যপণ্যে ট্যারিফ মূল্য বিলুপ্ত করা। এ ছাড়া পুরো বাজেটে প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে, যা ভোক্তা শ্রেণীর ব্যয় বাড়াবে। তবে তুলনামূলকভাবে উচ্চ ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তদের অযৌক্তিভাবে গুরুত্ব কম দেয়া হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর থেকেই জাতীয় সংসদের ভেতরে-বাইরে সঞ্চয়পত্রে বাড়তি উৎসে কর প্রত্যাহারের জোর দাবি উঠেছিল। তবুও তা কমানো হয়নি। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বৃদ্ধির বোঝা রয়েই গেল। বাজেটে বিভিন্ন করের খড়গ নেমে আসার পরপরই গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো আবার। এতে মানুষের জীবনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। জ্বালানি ও ভ্যাটের সাথে সব কিছু জড়িত; বিশেষ করে পণ্যের দাম, পরিবহন ব্যয় ও বাড়ি ভাড়া। এর প্রভাব জীবনযাত্রার সব ক্ষেত্রেই পড়বে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে প্রধানত মধ্যবিত্তরা হয়তো সঞ্চয় ভেঙে খাবেন অথবা তাদের জীবনযাত্রার মান কমবে।
থমকে গেছে মধ্যবিত্তের উপার্জন। আগের আর্থসামাজিক অবস্থা তারা ধরে রাখতে পারছেন না। অর্থনৈতিক ক্ষেত্র সঙ্কুুচিত হচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি গুরুত্ব হারাচ্ছে দেশ ও সমাজে। অতীতের সব গণ-আন্দোলনে অগ্রণী এই শ্রেণী ক্রমাগত হীনবল হয়ে পড়ছে। বহু মানুষ নিম্নবিত্তে পরিণত হচ্ছেন। এর অন্যতম কারণ, দেশের সম্পদ অতি দ্রুত মুষ্টিমেয় লোকের হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। বৈষম্য বৃদ্ধির এ প্রবণতা দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সঙ্কুচিত হয়ে বাড়ছে অতি ধনীর সংখ্যা। এ দিকে, মধ্যবিত্তের মনে ‘পিছিয়ে পড়ার’ অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে। তারা যেন সমাজের মূল স্রোতধারার বাইরে চলে যাচ্ছেন। এ কারণে তাদের মধ্যে ‘ক্ষমতাকাঠামো’র বিরোধী রাজনীতিতে সমর্থন দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এতে সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। মধ্যবিত্তদের আয় বৃদ্ধির হার হতাশাজনক।
দেশের শাসকমহলকে ভাবতে হবে, মধ্যবিত্ত শ্রেণী বরাবরই শাসনব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রাষ্ট্র-সমাজ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী সেতুবন্ধনের ভূমিকা পালন করে। তারাই আজ চাপের মুখে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আর্থসামাজিক অবস্থানের ভঙ্গুরতা রোধে বাস্তবসম্মত ও স্থায়ী কী পদক্ষেপ নেয়া যায়; তা রাষ্ট্রকে অবিলম্বে ভাবতে হবে। কিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানো যায়, সে পথও বের করতে হবে।
আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মধ্যবিত্তের বিকাশ ছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজে অবাঞ্ছিত ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। তা কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। তাই মধ্যবিত্তের জন্য রাষ্ট্রকে যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দিতে হবে। এ জন্য তাদের উপযোগী প্রধানত অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করা সময়ের দাবি। যত দ্রুত তা করা হবে, রাষ্ট্র ও সমাজ তত তাড়াতাড়ি স্থিতিশীলতা অর্জন করবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement