২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
ফের গ্যাসের দাম বাড়ানো

বাড়িয়ে তুলবে জনদুর্ভোগ

-

দেশের বেশির ভাগ মানুষ নিত্যদিনের ব্যয়ভার সামলাতে চাপে রয়েছেন। জীবনযাত্রার ব্যয় লাগামহীন বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাস উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন করে গ্যাসের দাম বাড়ানোয় জনজীবনে দুর্ভোগ আরো বেড়ে যাবে। বাড়বে শিল্পের খরচ, বিশেষ করে সঙ্কটে পড়বে পোশাক ও বস্ত্র খাত। পরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে নতুন করে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গ্যাসের নতুন নির্ধারিত দাম কার্যকরের তারিখ ধরা হয়েছে পয়লা জুলাই থেকে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম গড়ে ২২ দশমিক ৭০ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছরের মার্চ ও জুলাই থেকে দুই ধাপে তা কার্যকর করার কথা ছিল। মার্চেরটা কার্যকর হলেও জুলাইয়ের দাম হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত করা হয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো কমিশনের কাছে গড়ে ১০২ ভাগ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। বিতরণ কোম্পানিগুলোর আবেদনে এলএনজির কারণে গ্যাসের দাম বাড়ানো দরকার বলে উল্লেখ করা হয়। এ নিয়ে মার্চে গণশুনানি করে কমিশন। শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে দামের বিষয়ে ঘোষণা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সে অনুযায়ী গত রোববার গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। এবার দাম বাড়ানো হলো গড়ে ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ।
লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোয় বিতরণ কোম্পানিগুলোর যত আগ্রহ; সে অনুযায়ী গ্রাহকসেবা দেয়ার ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখা যায় না। বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করা হয় না। বিশেষ করে বাসাবাড়িতে গ্যাসের চাপ না থাকায় মাঝে মধ্যেই রান্নাবান্না করতে না পেরে গ্রাহকেরা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহান।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর নতুন এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আবাসিকে এক চুলার দাম ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা করা হয়েছে। দুই চুলায় ৮০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৭৫ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশার জন্য প্রতি ঘনমিটার ৩৮ টাকা থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ টাকা। হোটেল ও রেস্টুরেন্টের জন্য প্রতি ঘনমিটার ২৩ টাকা এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ১৭ টাকা চার পয়সা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস প্রতি ঘনমিটার দুই টাকা ৯৯ পয়সা থেকে বাড়ানো হয়েছে চার টাকা ৪৫ পয়সা, ক্যাপটিভ পাওয়ারে আট টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বাড়ানো হয়েছে ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা, সার কারখানায় দুই টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়ানো হয়েছে চার টাকা ৪৫ পয়সা এবং শিল্পকারখানা ও চা বাগানে ১০ টাকা ৭০ পয়সা করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম। এ ছাড়া মিটারভিত্তিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার করা হয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন অর্থবছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানিতে ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ঘাটতি তৈরি হবে। এ ঘাটতি মেটাতে ভোক্তাপর্যায় থেকে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা তোলা হবে। আর সরকার ভর্তুকি দেবে সাত হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। দাম বাড়ানোর বিষয়ে কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, দেশের সামগ্রিক জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও সমাজে জ্বালানি ব্যয়ের বৈষম্য কমাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে জনজীবনে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সংগঠন, সিএনজি স্টেশন মালিকসহ ভোক্তারা এ দাম বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করেন। বর্ধিত দাম প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
যারা গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করছেন তাদের সাথে সহমত পোষণ করে আমরা বলতে চাই, জ্বালানির্ভর এই সময়ে যেকোনো জ্বালানির দাম বাড়ানোর অর্থ হচ্ছে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া। তাই কমিশনের চেয়ারম্যানের দাবি প্রশ্নবিদ্ধ। সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান, জীবনযাত্রার সাথে যেসব জিনিস জড়িত, সেগুলোর দাম বাড়ানোর আগে সাধারণ মানুষের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া অতীব জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement