২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাস্তুরিত দুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা

নিরাপদ নাকি অনিরাপদ?

-

মানুষের জন্য দুধ একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এটি মানবদেহের শরীর গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি অন্যতম প্রধান শিশুখাদ্য। দুগ্ধজাত খাদ্যদ্রব্য আমাদের সবার অতিপ্রিয়। তাই এই দুধ ভেজালমুক্ত থাকা খুব জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এ দেশে প্রায় সব খাবার এখন ভেজালযুক্ত। দূষিত খাদ্যদ্রব্যে বাজার সয়লাব। গত বছর আইসিডিডিআর,বি’র প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন কোম্পানির পাস্তুরিত দুধে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান রয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে ২০১৮ সালের ১৭ মে ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়’ উল্লেখ করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে প্রকাশ প্রতিবেদনগুলো নজরে আনা হলে আদালত এ বিষয়ে রিট আবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২০ মে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন এক আইনজীবী। বাজারে পাওয়া যায়, এমন সব ব্র্যান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) বাজারে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে গত মঙ্গলবার এর ফলাফল আদালতে উপস্থাপন করেছে। ১৪ ব্র্যান্ডের ১৮টি পাস্তুরিত দুধের নমুনা পরীক্ষা করে ক্ষতিকর ‘কোনো কিছুই পায়নি’ বিএসটিআই। অন্য দিকে, খাদ্যের গুণগত মান নিয়ে সরকার ও সাধারণ মানুষের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে তেল, দুধ, মসলাসহ আট ধরনের ৭১টি ভোগ্যপণ্যের নমুনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়। তাতে ৬৯টি পণ্যই ‘মানহীন’ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এ ছাড়া ঢাবির পরীক্ষায় পাস্তুরিত তরল দুধের সাতটি নমুনাতেই মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান অ্যান্টিবায়োটিক মিলেছে। দীর্ঘমেয়াদে এই ক্ষতিকর উপাদান মানুষকে জটিল রোগে আক্রান্ত করতে পারে। এই পরীক্ষা করা হয়েছে বিএসটিআই নির্ধারিত মানদণ্ডে। একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলাফল সংবাদ সম্মেলন করে প্রকাশ করা হয়। একই বিষয়ে দু’টি প্রতিষ্ঠান পরস্পরবিরোধী তথ্য প্রকাশ করায় এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা লক্ষ করা গেছে। এ নিয়ে আমরা চিন্তিত না হয়ে পারি না।
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, একই বিষয়ে এই যে পরস্পরবিরোধী ফলÑ এটি কী করে সম্ভব? আমাদের সাধারণ বিবেচনায় বলে, এর একটি অবশ্যই ভুল। তবে কোন প্রতিষ্ঠানের ভুল হয়েছে, তা নির্ধারণে এখন সরকারের উচিত মানসম্পন্ন তৃতীয় আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করিয়ে সেই ফলাফল জনসমক্ষে অবিলম্বে প্রকাশ করা। প্রয়োজনে দেশের বাইরে একাধিক উন্নত দেশের পরীক্ষাগারে দুধের নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা করিয়ে সঠিক তথ্য দেশবাসীকে জানাতে হবে।
দেশের নাগরিকদের নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কারো জানা, নিরাপদ খাবার পাওয়া মানুষের একটি মৌলিক অধিকার। নিরাপদ খাবারের ওপর নির্ভর করে মানষের সুস্থ থাকা না থাকা। তাই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে সরকার দ্রুত এর সমাধানে উদ্যোগ নেবে, এমনটিই প্রত্যাশা দেশবাসীর।

 


আরো সংবাদ



premium cement