১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আওয়ামী লীগের ৭০ বছর পূর্তি

গণতান্ত্রিক চরিত্রই সবার কাম্য

-

২৩ জুন পালিত হলো দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তদানীন্তন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রসেনানী এই দলটি। দীর্ঘ পথচলায় দলটির অনেক বড় বড় সফলতা রয়েছে। সেই সাথে আছে বড় বড় অনেক ব্যর্থতাও। সাফল্য-ব্যর্থতা মিলিয়েই যেকোনো ব্যক্তি বা দলের মূল্যায়ন করা উচিত এবং এটাই স্বাভাবিক। তবে ব্যর্থতার গ্লানি যদি বড় হয়ে ওঠে তাহলে অতি উজ্জ্বল সাফল্যও কালের অন্ধকার গহ্বরে তলিয়ে যায়।
প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ৭০ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের সাফল্যের মুকুটে আছে ভাষা আন্দোলন, ’৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম। কিন্তু স্বাধীনতার পর ক্ষমতাসীন হয়ে আওয়ামী লীগ দুঃশাসনের যে জগদ্দল পাথর দলটি চাপিয়ে দেয় জাতির কাঁধে, তার দায় থেকে তারা কখনোই মুক্ত হতে পারেননি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ‘বাকশাল’ নামের একদলীয় শাসন, ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি আওয়ামী লীগের নামের সাথে চিরকালের জন্য জড়িয়ে গেছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর টানা ২১ বছর দলটি ক্ষমতার বাইরে থাকতে বাধ্য হয় অনেকটা সে কারণেই। পরে জাতির কাছে ‘শর্তহীন’ ক্ষমা চেয়ে এবং আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোর অনৈক্যের সুযোগে ১৯৯৬ সালে দলটি ক্ষমতায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এ ক্ষেত্রে স্বৈরাচারবিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলনে সামনের সারিতে থাকার কৃতিত্বও নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা রেখেছে।
১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় পর্বে ক্ষমতায় এসে দলটি পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি সম্পাদন করতে সক্ষম হয়। পরে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারণও তাদের সরকারের সাফল্য বটে। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত দলটি নানা কৌশলে শাসনক্ষমতা ধরে রেখেছে। পরপর তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাটা আওয়ামী লীগের বড় অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা ক্ষমতাসীনরা করছেন; কিন্তু ভোটারবিহীন যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটি ক্ষমতায় আছে, সেটি এ দলের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। শাসনকাজে একক কর্তৃত্ব, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা খর্ব করা, বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্মূল করার প্রয়াস, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি উপেক্ষা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে দেয়ার মতো বিভিন্ন অবাঞ্ছিত কর্মকাণ্ড বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের হাতেই ঘটেছে। ভবিষ্যতে দলীয় ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে এই বিষয়গুলো দলটির বিরুদ্ধে জ্বলন্ত সাক্ষ্য হিসেবে সামনে আসবে। আমাদের ধারণা, বিষয়গুলো দলটির সব অর্জনকে ম্লান করে দেবে।
উপর্যুপরি তিনবার ক্ষমতায় থেকেও ভারতের সাথে তিস্তা চুক্তি করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ব্যাপারে তীব্র প্রচারণা সর্বত্র জোয়ারের মতো ছড়িয়ে গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এই অগ্রগতি আসলে চিরস্থায়ী ক্ষতের আকারে থেকে যাবে কি না, এমন সংশয় প্রকাশ করছেন দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকারের কথা আওয়ামী লীগই বেশি বলে; কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের জনগণ ভোটবিমুখ হয়ে পড়েছে। সঙ্ঘাত, হানাহানি, প্রতিহিংসার রাজনীতি, গুম-খুন অপহরণ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে দেশ, সমাজে মাদকের সয়লাব বয়ে যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত নারী-শিশুরা ধর্ষিত হচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির দরুন সামাজিক অবক্ষয় বেড়েছে। এসব ব্যর্থতার দায় আওয়ামী লীগ এড়াতে পারে না।
সুজন-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী দল, স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে, বহু গণতান্ত্রিক সংগ্রামে তাদের অনেক ভূমিকা ও সাফল্য রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত গত তিন মেয়াদে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু অবদান ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের যে ব্যর্থতাÑ তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হলো, নির্বাচনীব্যবস্থা ভেঙে পড়া। আমাদের গণতান্ত্রিকব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি দুর্বৃত্তায়নের বিস্তার ঘটেছে এবং একটা ‘ফায়দার রাজনীতি’র চর্চা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের এখন যে কার্যক্রম, তা তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে মেলে না।
আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক ও গণমুখী চরিত্র প্রাধান্য পাবে এমনটাই আমরা আশা করি।


আরো সংবাদ



premium cement