২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
শস্যবীমার প্রস্তাব

নিশ্চিত করতে হবে খাদ্য নিরাপত্তা

-

আজো কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির বড় অংশজুড়ে রয়েছে। মোট জাতীয় উৎপাদনে এর অবদান সাম্প্রতিক সময়ে কমবেশি ১৪ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে (২০১৯-২০) জাতীয় উৎপাদনে এর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। তৈরী পোশাকের অবদানও প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে কৃষির অবদান অনেক বেশি। কারণ এ দেশের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিকাজে নিয়োজিত। অর্থাৎ এই খাতের কোনো ধরনের উন্নয়ন মানে, দেশে ৮০ শতাংশ মানুষের উন্নয়ন। আমরা দেখেছি, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষি বরাবরই থেকেছে অবহেলিত। কৃষক অনেকটাই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল থেকে ফসল উৎপাদন করছেন। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই তারা বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হন। অনেক সময় ফসলহানির কারণে তারা নিঃস্ব হয়ে যান। অর্থাৎ কৃষকদের জীবিকার ন্যূনতম নিরাপত্তাও নেই। এ অবস্থায় শস্যবীমা চালু করার উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে। এটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ।
প্রথমে পাইলট প্রকল্প হিসেবে সাতটি জেলায় শস্যবীমা চালু হবে। সফলতা পেলে পর্যায়ক্রমে সারা দেশের কৃষকেরা এর আওতায় আসবেন। ১০ ধরনের সুবিধা নিয়ে শস্যবীমা প্রকল্প চালু হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ লাইন তৈরি করা হবে। এর অভাবে কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকেরা পাচ্ছেন না তাদের পণ্যের ন্যায্য দাম। অন্য দিকে চড়া দাম গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এবার ধান-চালের দাম নিয়ে কৃষকেরা তেমন বিপত্তিতে পড়েছেন। অন্যান্য শস্য উৎপাদন নিয়েও কৃষক প্রায়ই বেকায়দায় পড়েন। শস্যবীমার আওতায় রয়েছে স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশন তৈরি করার বিষয়। এর মাধ্যমে আরো কয়েকটি কাজ হবে। পাহাড়ি ঢলের মাত্রা নির্ণয় করা সম্ভব হবে। আবহাওয়ার খবরের সাথে সাথে অন্যান্য সচেতনতামূলক খবরও পৌঁছে দেয়া হবে। এর ফলে কৃষক এক দিকে কৃষিসংক্রান্ত তথ্য পাবেন; অন্য দিকে বাজারের অবস্থাও হালনাগাদ জানতে পারবেন। ইতোমধ্যে সাধারণ বীমা করপোরেশনের মাধ্যমে এর একটি ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে। ধারণাপত্রটি সরকারের অর্থ বিভাগের হাতে এসেছে। তারা এ সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করেছে।
২০১৭ সালের আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলে ৫২ লাখ ৫০ হাজার টন ফসলহানি ঘটেছিল। এতে অনেক কৃষক ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা হারান। অনেক কৃষক পরিবার একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। এর ফলে বেশ কিছু সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। চালের বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফড়িয়ারা বাজারে চালের দাম একচেটিয়া বাড়িয়ে দেয় এ সুযোগে। অন্য দিকে এবার যখন ধানের বাম্পার ফলন হলো; চালের দাম গেল পড়ে। ফলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিরাশ হয়ে গেলেন। আগামী বছর থেকে আর ধান চাষ করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন অনেক কৃষক। অথচ এ ধরনের প্রান্তিক কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রত্যেক দেশেই সুরক্ষা কার্যক্রম রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন ধনী দেশে বিপন্ন কৃষকদের রক্ষার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রচুর ভর্তুকি দেয়া হয়।
মূল ব্যাপার হচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা তৈরি করা। দেশের স্বার্থেই রক্ষা করতে হবে কৃষকদের। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত, খরা, আগাম বন্যা, অসময়ে বন্যা ইত্যাদি কারণে শুধু কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না; আমাদের পুরো খাদ্যব্যবস্থাকে এটা নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে কৃষকদের নিরাপত্তা দিতে হবে অবশ্যই। এ ক্ষেত্রে প্রধান দায়িত্ব সরকারের। বীমা কার্যক্রম বেগবান করতে হলে এবারের বাজেটের আওতায় এটাকে এগিয়ে নিতে হবে। আমরা আশা করি, সরকার এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement