২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
এবার আরো কাছে বিদ্যুৎ প্রকল্প

সুন্দরবনের কথা ভাবতে হবেই

-

বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিরাট ঝুঁকিতে রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা এর প্রভাবে হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনের কোলঘেঁষে নেয়া হচ্ছে এমন সব প্রকল্প, যা এ অরণ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। উন্নয়নের নামে এসব প্রকল্প নিতে গিয়ে আমরা ভুলে যাচ্ছি, দেশের প্রাণ-প্রকৃতিকে যথাযথ সংরক্ষণ করতে না পারলে এর মাশুল আমাদেরই দিতে হবে।
নির্মাণাধীন রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্তির হুমকিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ‘ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট’ সুন্দরবন। সম্প্রতি বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে ইউনেস্কো। এ ঝুঁকির মুখেই সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যে আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ১০০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করতে চায় একটি বেসরকারি কোম্পানি।
১৯৯৭ সালে সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সুন্দরবনকে ১৯৯৯ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে ইউনেস্কো। তবে সুন্দরবন এলাকায় রামপালে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছে সংস্থাটি। ২০১৬ সালে ইউনেস্কো এবং আইইউসিএনের একটি যৌথ পর্যবেক্ষণের পর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র’ প্রস্তাব দিয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্য কোথাও সরিয়ে নিতে। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থায় অসন্তুষ্ট ইউনেস্কো সুন্দরবনকে ঝুঁকিতে থাকা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ৭ জুন ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের বার্ষিক সভা আগামী ৩০ জুন থেকে ১০ জুলাই আজারবাইজানে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় ইউনেস্কোর সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। নতুন করে আরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন ইউনেস্কোকে বিরূপ সিদ্ধান্ত নিতে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাওয়ারপ্যাক এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের অনুমোদন পেয়েছিল ২০১২ সালে। সে সময় এটি ঢাকার কাছে কেরানীগঞ্জে নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু উদ্যোক্তারা নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এর সময়সীমা বারবার বাড়িয়ে নেয় ওই কোম্পানি। ২০১৭ সালের দিকে প্রকল্পটি সুন্দরবনের পাশে মংলা অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডÑ পিডিবির কাছে আবেদন করেছিল পাওয়ারপ্যাক। এ বিষয়ে পিডিবির প্রাথমিক সম্মতি পেয়ে পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা বা ইআইএ সম্পন্ন করে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইআইএ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে পরিবেশ অধিদফতর দেখতে পায়, প্রকল্পটি সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনের প্রান্তসীমা থেকে সাড়ে চার কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত, যা সুন্দরবনের পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকার (ইসিএ) মধ্যেই পড়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, পাওয়ারপ্যাকের প্রকল্পটি ‘লাল’ বা বিপজ্জনক শ্রেণিভুক্ত।
সামগ্রিক পরিবেশগত সমীক্ষা (এসইএ) সম্পন্ন হওয়ার আগে সুন্দরবনের ইসিএ এবং এর আশপাশে বড় আকারের শিল্পকারখানা স্থাপন না করতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে ইউনেস্কো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কমিটির কাছে বাংলাদেশ সরকার যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, এসইএ সম্পন্ন হওয়ার আগে সুন্দরবনের সঙ্কটাপন্ন এলাকায় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি। এ দিকে, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরোধিতা করে দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তাদের দাবিÑ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবন ও এর আশপাশের পরিবেশ, বায়ু ও পানি দূষিত হবে, যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনকে ঠেলে দেবে হুমকির মুখে। এখন আরো বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।
সুন্দরবন হচ্ছে আমাদের জন্য আল্লাহপ্রদত্ত এক অপার দান। সবার উদ্বেগ আমলে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যথাযথ সমীক্ষা করিয়ে সুন্দরবনের ক্ষতি হতে পারে, এমন সব প্রকল্প নির্মাণ ও অনুমোদন দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে সরকারকে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী গাজীপুরে গাঁজার বড় চালানসহ আটক ২

সকল