২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
দেশে প্রথম লোহার খনি আবিষ্কার

দ্রুত উত্তোলনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত

-

বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো উন্নতমানের লোহার আকরিকের (ম্যাগনেটাইট) খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। দিনাজপুরের হাকিমপুরে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের (জিএসবি) কর্মকর্তারা দুই মাস ধরে কূপ খনন করে অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে গত মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ভূতাত্ত্বিক জরিপ দল বলছে, ভূগর্ভের ১৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার আকরিকের একটি স্তর পাওয়া গেছে, যা এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। এর ব্যাপ্তি হতে পারে ৬ থেকে ১০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত।
হাকিমপুর উপজেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইসবপুর গ্রাম। এ গ্রামের কৃষক ইসহাক আলীর কাছ থেকে ৫০ শতক জমি চার মাসের জন্য ৪৫ হাজার টাকায় ভাড়া নিয়ে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করেছিল ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। গত ১৯ এপ্রিল থেকে সে গ্রামে কূপ খনন শুরু করা হয়। ৩০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল তিন শিফটে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। দুই মাস ধরে কূপ খনন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে খনি আবিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করেন জিএসবির কর্মকর্তারা। তারা জানান, সেখানে ভূগর্ভের ১৭৫০ ফুট নিচে ৪০০ ফুট পুরুত্বের লোহার একটি স্তর পাওয়া গেছে। এটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত প্রথম লোহার খনি। খননকাজে নিয়োজিত জিএসবির একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গণমাধ্যম জানাচ্ছে, যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কৃত হয়েছে, সেসব খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে; আর বাংলাদেশের লোহার মান ৬৫ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) পরীক্ষাগার থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এখানে কপার, নিকেল ও ক্রোমিয়ামেরও উপস্থিতি রয়েছে। ১১৫০ ফুট গভীরতায় চুনাপাথরের সন্ধানও মিলেছে।
খননকাজে নিয়োজিত জিএসবির উপপরিচালক মোহাম্মদ মাসুম সাংবাদিকদের জানান, বিশ্বের যে কয়েকটি দেশে লোহার খনি আবিষ্কার করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের আকরিকে লোহার শতাংশ ৬৫-এর ওপরে। কানাডা, চীন, ব্রাজিল, সুইডেন ও অস্ট্রেলিয়ার খনির লোহার মান ৫০ শতাংশের নিচে।
ইসবপুর গ্রামের বাসিন্দারা এ আবিষ্কারের খবর শুনে আনন্দিত। তারা আশা করছেন, এখান থেকে লোহা উত্তোলন করা হলে এলাকার মানুষের জীবনমান পাল্টে যাবে এবং কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় মানুষের। দেশের জন্যও সেটি লাভজনক হবে। তাই গুরুত্ব বিবেচনায় সরকারের কাছে খনির প্রকল্প বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান তারা। স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহফুজার রহমান বলেন, খনির কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থান হবে। পাল্টে যাবে এ অঞ্চলের জীবনযাত্রার মান। এমনই আশায় বুক বাঁধছেন এলাকার মানুষ।
আমরা জানি, চীন, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, কানাডা সর্বাধিক লোহা উৎপাদনকারী দেশ। বিশেষ করে ভারতের বেশ কিছু লোহার খনি আছে আমাদের অনেকটা কাছের উড়িষ্যা রাজ্যে। ইসবপুরের খনি থেকে লোহা উত্তোলনে ওই সব দেশের অভিজ্ঞতা আহরণের প্রয়োজন আছে কি না আমাদের জানা নেই। এ দেশে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের ঘাটতি থাকার কথা নয়। প্রয়োজনে তারা যথাযথ প্রযুক্তি প্রয়োগের পরামর্শ দিতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।
অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম সম্ভবত এখন পড়তির দিকে। বাজারে লোহার সরবরাহ যথেষ্ট। সে কারণে কোনো কোনো দেশ লোহার উত্তোলন কমিয়ে দিচ্ছে। তাই লোহা রফতানি করে খুব লাভবান হয়তো হওয়া যাবে না। তবে নতুন খনির লোহা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে এবং ভোক্তাদের ব্যয় সাশ্রয় হবে, এমন আশা করাই যায়। সেটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। এর চেয়েও বড় কথা, খনি চালু হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিপুল জনসংখ্যার এই দেশে নতুন কর্মসংস্থানের যেকোনো সুযোগই একটি বড় সুখবর নিঃসন্দেহে। মানুষ কাজ পেলে তাদের জীবনযাত্রার মানে উত্তরণ ঘটবে; যা গোটা দেশের অর্থনীতির জন্য সুফল বয়ে আনবে। জিএসবির এই আবিষ্কারে আমরা আনন্দিত। আশা করব, সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে এবং যতশিগগির সম্ভব এই খনি বাস্তবায়ন করবে।


আরো সংবাদ



premium cement