২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
‘সীমান্তে হত্যা নয়, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’

বিএসএফকেই দায় নিতে হবে

-

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রায় সময়েই ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে বাংলাদেশী নাগরিকেরা অন্যায়ভাবে নিহত ও নির্যাতিত হচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত খবর ও ছবি বহুবার মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষও বিষয়টি বারবার তুলেছেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে। তবুও বিএসএফ প্রধান ঢাকায় এসে এবার বললেন, সীমান্তে লোকজন নিহত হওয়া ‘হত্যাকাণ্ড নয়, অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু’।
ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনের পর যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএসএফের মহাপরিচালক রজনীকান্ত মিশ্র এ কথা বলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, গত বছর ভারত সীমান্তে কেবল একজন বাংলাদেশী নাগরিক এবং ছয়জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন। তবে তিনিও স্বীকার না করে পারেননি যে, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ‘অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যুর’ ঘটনা বেড়েছে। বিএসএফ প্রায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু-একজন বাংলাদেশীকে গুলি করে হতাহত বা পঙ্গু করার খবর পত্রিকায় ছাপা হয়। সেই বেপরোয়া বাহিনীর প্রধান হিসেবে তিনি সাফাই গাইলেনÑ ‘প্রাণ বাঁচাতে বিএসএফ হামলা শুধু প্রতিহত করে।’ পত্রিকার খবরে প্রকাশ, গত পাঁচ মাসে সীমান্তে কমপক্ষে ১৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হওয়া সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে হাস্যকর উক্তি করে তিনি বলেছেন, “আমরা প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছি না। মানুষের জীবনকে বিএসএফ সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তবুও ‘মাঝে মধ্যে’ দু-একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে যায় যা ‘খুব সামান্য’।” বিএসএফ প্রধানের দাবি, “তাদের ওপর পাথর ছোড়া, দা নিয়ে হামলা, তাদের লাঠিপেটা করা প্রভৃতি ঘটে থাকে। তাই ‘অল্প কিছু’ ক্ষেত্রে বিএসএফ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।” গত মাসে সাতক্ষীরা সীমান্তে বিএসএফের নির্যাতনে একজন বাংলাদেশী যুবকের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে এই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ডিজি বলেন, এগুলো কখনোই হত্যাকাণ্ড নয়, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এ ধরনের সব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং পুলিশ তদন্ত করছে। বহুলালোচিত ‘ফেলানী হত্যাকাণ্ড এবং মেহেরপুরে আম পাড়তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে বালকের নিহত হওয়ার ঘটনার কোনো বিচার হয়েছে কি?’ বিএসএফের প্রধান সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি। ভারতীয় সীমান্ত দিয়েও এ দেশে ইয়াবার অনুপ্রবেশ ঘটছেÑ এ প্রসঙ্গে বিএসএফ প্রধান বলেন, ‘এর জোগানদার তৃতীয় কোনো দেশ।’ বলা নি®প্রয়োজন, বাংলাদেশে ইয়াবা প্রধানত মিয়ানমার থেকে আসে এবং সে দেশের সাথে ভারতের বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠতা এখন প্রবাদপ্রতিম। বিএসএফ-বিজিবি শীর্ষ বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হলেও সীমান্তে উগ্রবাদী তৎপরতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবার অ্যাজেন্ডাতেই ছিল না।
বিএসএফ বা ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিশেষত বাংলাদেশী নাগরিকসহ নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজন এত বেশি হতাহত করেছে যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়া এই বাহিনীকে খুনি হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রায়ই আমাদের দেশের পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, বিএসএফ তুচ্ছ ঘটনায় এমনকি অকারণেও গুলি ছুড়ছে, বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকদের পিটিয়ে ও নির্যাতন করে হত্যা করছে; কখনো বা তাদের হত্যা করে লাশ নিয়ে যাচ্ছে। কুড়িগ্রাম সীমান্তে কয়েক বছর আগে গরিব ও অসহায় কিশোরী ফেলানীকে হত্যা করে বিএসএফ কাঁটাতারে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখার ঘটনা সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছে। এ দিকে, শীর্ষ বৈঠকে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বারবার ওয়াদা করছে, সীমান্তে হত্যার ঘটনা শতভাগ বন্ধ করা হবে। কিন্তু তারা এই প্রতিশ্রুতি বারবার ভঙ্গ করেও অনুতপ্ত নন।
বাস্তব অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং মিডিয়াতেও প্রমাণ মিলছে যে, বাংলাদেশ সীমান্তে ঘনঘন মানুষ হত্যার দায় বিএসএফ কিছুতেই এড়িয়ে যেতে পারে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement