২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মরুকরণের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন

-

বিশ্বের অনেক দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রকৃতিকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করায় দেশে দেশে এর নেতিবাচক প্রভাব লক্ষণীয়। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে মরুকরণের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশটি হয়তো একদিন হারিয়ে যেতে পারে মরুভূমির ধূসর বালির গহ্বরে।
মরুকরণের প্রধান লক্ষণÑ বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সেখানকার মাটি অনুর্বর হতে থাকা, নদীনালা, খালবিল শুকিয়ে যাওয়া এবং বৃষ্টির অভাব। কয়েক দশক ধরে এসব লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে দেশের কৃষিজমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে। মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ৫ শতাংশ থাকলে তা উর্বর। দেশের কৃষিজমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ বর্তমানে ১ শতাংশ। রাসায়নিক সার ব্যবহার ও শাকসবজির বদলে ধান চাষ বেশি হওয়ায় মাটি গুণাগুণ হারিয়ে অনুর্বর হয়ে পড়ছে। বর্ষা বা শীত মওসুমে প্রথাগত চাষাবাদ করলে কৃষিজমির উর্বরতা বাড়ত। কিন্তু প্রথাগত চাষাবাদ এখন বন্ধ। কৃষক ঝুঁকছেন রাসায়নিক সারের দিকে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন দেশের কৃষিজমি পুরোপুরি অনুর্বর হয়ে পড়বে, যা মরুকরণ ঝুঁকির একটি প্রধান দিক।
অন্য ঝুঁকিটি হচ্ছেÑ দেশে জলাধার বিপন্ন হচ্ছে। দেশে বৃষ্টির অভাব নেই। যে চার মাস বৃষ্টি হয়, সেই পানি নদীসহ খালবিল ও বিস্তীর্ণ জলাভূমিতে আটকে থাকে; যা পরবর্তী দিনগুলোতে আমাদের পানির চাহিদা মেটায়। কিন্তু অপরিকল্পিত নগরায়ন ও যথেচ্ছভাবে কৃষিকাজের কারণে জলাভূমি শুকিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে দেশের অনেক নদনদী কয়েক দশক ধরে বেশির ভাগ স্থানে খরার সময় শুকিয়ে যায়। এ পরিস্থিতিতে কৃষিজমি সংরক্ষণ, কৃষিকাজে জৈবসার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিতকরণে প্রচার, অপরিকল্পিত নগরায়ন নিষিদ্ধ করা, নদীর পানিপ্রবাহ নিশ্চিতে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া, খালবিল ও জলাভূমি সংরক্ষণে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
পরিকল্পনার অভাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদী হারিয়ে যাচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তাসহ ভারত-বাংলাদেশের আন্তঃনদীগুলোর পানিপ্রবাহ রোধ দেশের নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ার বড় কারণ। তবে তা দুই দেশের আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তির বিষয়। কিন্তু জলাভূমি সংরক্ষণ আমাদের নিজেদের হাতে। সেসব সংরক্ষণে রাষ্ট্রের কোনো নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি এবং পরিকল্পনা না থাকায় দেশের জলাভূমিগুলো থেকে অধিক হারে পানি নিষ্কাশন করে তা শুকিয়ে ফেলা হচ্ছে। এগুলো কৃষিজমিতে পরিণত হচ্ছে। ফলে গ্রীষ্মে নদীগুলো পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। গ্রীষ্মকালে নদীগুলোর পানিপ্রবাহের প্রধান উৎস ছিল জলাভূমির পানি। সেটি পুরোপুরি হারিয়ে গেছে।
মানুষের অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রের উদাসীনতায় বাংলাদেশ মরুকরণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের কৃষিজমিসহ সব ভূমির ওপরের স্তরে বালির পরিমাণ বাড়ছে। নদীর বালি তুলে বাড়ি নির্মাণ, জলাভূমি শুকিয়ে শস্য আবাদ হচ্ছে। এতে প্রকৃতির স্বাভাবিকতা নষ্ট হচ্ছে। তবে বন্যা বাংলাদেশের জন্য একটি আশীর্বাদও বটে। এতে দেশের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে পলির স্তর ছড়িয়ে যায়। কিন্তু অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে আমরা জমির সেই পুনরুজ্জীবনের পথ রুদ্ধ করছি।
দেশকে মরুকরণের ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে জমির অনুর্বরতা ঠেকাতে জৈব সারের প্রতি কৃষকদের উৎসাহিত করা উচিত। হাউজিং ব্যবসায়ীদের হাত থেকে জলাভূমি রক্ষা, তা থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন ও চাষাবাদ বন্ধ করা, নদীর প্রবাহ ঠিক রাখতে অপরিকল্পিত বাঁধ নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করা এবং উপযোগী কৃষিকাজ এবং সার ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাহলেই দেশের মরুকরণ ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি হাতে নেয়া প্রয়োজন। আর অর্থের সংস্থানে কর্মসূচি বাস্তবায়নে তহবিলের জন্য দেশীয় উৎসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে কূটনৈতিক পর্যায়ে কার্যকর যোগাযোগ রাখতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পেকুয়ায় জমি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ১৪ তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ : টিআইবি লেবাননে ইসরাইলি হামলায় ইরান সমর্থিত যোদ্ধা নিহত জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সংশ্লিষ্টতা : ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের

সকল