২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইউনেসকোর সুপারিশ

ঝুঁকিতে সুন্দরবনের বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান

-

১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে সুন্দরবনকে বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান দেয় ইউনেসকো। তবে তাতে শর্ত ছিল এই বনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হয় এমন কোনো তৎপরতা চালানো যাবে না। শর্ত লঙ্ঘনের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হলে বনটির বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান চলে যাবে। বিশ্ব-ঐতিহ্য হিসেবে এর সম্মান ধরে রাখতে যেসব নিয়ম ও শর্ত পালনের অঙ্গীকার করেছিল বাংলাদেশ, সেগুলো লঙ্ঘিত হলে এবং সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হলে সেই সম্মান আর থাকবে না, এটিই স্বাভাবিক। বনটির কোলঘেঁষে রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজের কারণে সম্প্রতি প্রাকৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিষদ আইইউসিএনের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ব-ঐতিহ্য কমিটির কাছে সুন্দরবনকে বিশ্ব-ঐতিহ্যের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে ইউনেসকো। বিশ্ব-ঐতিহ্য কমিটির বার্ষিক সভা হবে ৩০ জুন থেকে ১০ জুলাই আজারবাইজানে। ওই সভায় ইউনেসকোর সুপারিশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের করা অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অগ্রগতি খুবই ধীর বলে মনে করে ইউনেসকো। এ বিষয়ে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেগুলো অপর্যাপ্ত মনে করে ইউনেসকো।
শুরু থেকেই সুন্দরবনের মাত্র ৬৫ কিলোমিটার দূরে রামপালে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের বিরোধিতা করে আসছিল ইউনেসকো। ২০১৬ সালে ইউনেসকো ও আইইউসিএনের একটি যৌথ পর্যবেক্ষণের পর বিশ্ব-ঐতিহ্য কমিটি প্রস্তাব দিয়েছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্য কোথাও নির্মাণ করার জন্য। তবে বাংলাদেশ সরকার সব সময় দাবি করে আসছে, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনকে বিপদাপন্ন করবে না। কিন্তু তা মানতে পারেনি ইউনেসকো। শেষ পর্যন্ত সুন্দরবনের সুরক্ষায় সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তুষ্ট ইউনেসকো লোনা পানির বনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করল।
বিশ্ব-ঐতিহ্য কমিটির পর্যালোচনায় বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার ইউনেসকোর কাছে সুন্দরবন রক্ষায় নেয়া উদ্যোগগুলো চিহ্নিত করে একটি প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, বনের চার পাশে কোনো শিল্পকারখানার অনুমোদন দেয়া হয়নি। সুন্দরবনসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ২০৪১ সাল পর্যন্ত একটি কৌশলগত পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। সুন্দরবনের মিষ্টি পানির প্রবাহ বাড়াতে গড়াই নদ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। একই সাথে বাঘ রক্ষায় একটি কর্মপরিকল্পনাও তৈরি করেছে।
ইউনেসকোর নথিতে বলা হয়, বিশ্ব-ঐতিহ্যের মর্যাদা পাওয়া সুন্দরবনের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, তার কোনো মূল্যায়ন না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবাহিত পায়রা নদীর ওপর দুটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ করা হচ্ছে। এতেও হুমকির মুখে পড়তে পারে সুন্দরবন। সরকার রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প অন্যত্র সরিয়ে নেয়নি, বাতিল করেনি বনের চার পাশের শিল্পকারখানাগুলোর অনুমোদনও। এ পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান বাতিল করে তাকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আগেও রামপাল প্রকল্প বাতিলের জন্য ইউনেসকো ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৬ সালে তিন দফায় সরকারকে সুপারিশ করেছিল।
আমরা চাই, সুন্দরবনের বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান অটুট থাকুক। আমরা মনে করি, এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। সরকারের একগুঁয়েমির কারণে সুন্দরবন বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান হারালে এটি বাংলাদেশের জন্য এটি দুঃখজনক অধ্যায় তৈরি করবে। সরকারের উচিত বিশ্ব-ঐতিহ্য কমিটির সভায় রামপালসহ সুন্দরবনের চার পাশের শিল্পকারখানাগুলোর বিষয়ে নতুন করে অঙ্গীকার করা। একই সাথে বনটি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।ঝুঁকিতে সুন্দরবনের বিশ্ব-ঐতিহ্যের সম্মান


আরো সংবাদ



premium cement